হারানো প্রায় স্মৃতির রোমন্থন
খডিলাগি একাদশী ১৫ ই জুন ২০১২ ( বাবার ২৬ তম শ্রাধ্য দিবস উপলখ্যে)
আজ থেকে প্রায় ৪৯ বছর আগের কথা । সাল টা ১৯৬৩-৬৪ ।আমার বাবা তখন দন্ডকারন্য প্রোজেক্টকেন্দ্র জায়গাটার নাম মাল্কান গিরি ; আমার বাবা কেন্দ্র সরকারের অধীনে ডেপুটেসন এ চাকরী সুত্রে পোস্টেড । জোনাল এগ্রিকালচার অফিসার, মাল্কানগিরি জোন ;কেন্দ্র সরকারের বরিষ্ঠ অধিকারি (Sr. Class I Officer)। জায়গাটার নাম ‘মাল্কানগিরি’ কারন সুউচ্চ পাহাড় দিয়ে ঘেরা এক বিশাল ভূমি এই এলাকা যার আসল নাম ‘মাল্যবন্তগিরি’ ।উডিশ্যার কোরাপুট জেলার এক দুর্ভেদ্য জঙ্গল এলাকা ছিল এই মাল্কানগিরি ।জয়পুর,কোরাপুট থেকে প্রায় ৬০কিলমিটার দুর।তখন চারিদেকে গভীর জঙ্গল বসতি শুন্য আদিবাসী প্রধান এলাকা।এখানে ডঙ্গরিয়া কন্ধরা আদীম অধিবাসী এবং এরা ভীষণ সরল প্রকৃতের মানুষ। তখন মাল্কানগিরি একটা সাব্ ডিভিসেনাল হেড ক্বাটার ছিল । চারিদিকে শাল,পিআশাল,শাগুআন (সেগুন) এর গভীর জঙ্গল । আমার খুব আনন্দ হত ওখানে গেলে ৷ কারন আমাদের ক্বাটার টা খুব বড় ছিল । মা ,সুন্দর বাগান করেছিলেন ৷ সামনে নানান ফুল আর ক্বাটার এর পেছনে নানান তরিতরকারি, শাক সবজি , বিশাল একটা আম গাছ ছিল । ওটা এমনি একটা জায়গা যে কাছে পিঠে কোথাউ বাজার ছিলনা , তাই মা নিজেহাতে রকমারি তরিতরকারি, শাক, কা৺চালঙ্কা ,পে৺পে, এমনকি প্রায় পঞ্চাশটা মুরগী ও পুষেছিলেন আমাদের সকলের জন্য যাতে খাওয়া দাওওার কোন অসুবিধে না হয় ।আমরা বাডির মুরগীর ডিম আর গোরুর দুধ খেতাম, বাইরেথেকে এসব কেনা হতনা । নীলকণ্ঠ আর মিশ্র নামে দুটো কাজের লোকছিল । ওরা বাগান আর দুটো গরুর দেখাশোনা করত। মা বলতেন , পড়াশুনো করতে হলে মগজে বুদ্ধী চাই , আর তার জন্য চাই উত্তম খাদ্য পানিয় । তাই আমাদের বাড়িতেই সব ব্যাবস্থা ছিল । আমরা গরমের ছুটিতে ‘বেলঘরিয়া’ থেকে সুদুর ‘মাল্কানগিরি’ যেতাম।এক জনাকীর্ণ স্থান থেকে জনশুন্য ঠিক বোলব না জনবিরল স্থান । চারিদিকে জঙ্গল হিংস্র জন্তু আর কিছু আদিবাসী নর নারী । সন্ধ্যা হলেই মাদলের ধ্বনিতে মৄদু গম্ভীর তাল বাদ্য যা মানুষের অস্তিত্ব র প্রতিক স্বারুপ । সে এক দারুন দৃশ্য না দেখলে বোঝা যায়না । নাচের তালে ধাংগডা ধাংগড়ী (ওদের ভাসায়) মাতাল অবস্থায় সারা দিনের পরিশ্রমের কষ্ট ভুলে যেত; মরদের কঠিন বাহু তে নিজেকে বুঝি হারিয়ে ফেলত ধাংগডীরা । সে দৄ্শ্য অত্যন্ত মনরম এবং হৃদয় স্পর্শী বাস্তব ভিজুয়াল যা টাকা দিলে ও কেউ পাবেনা এখন ! এটাই প্রকৄতির এবং ভগবানের সৄস্টির আসল রুপ। উতলা হয় মন ওখানে আবার যেতে!
বাবা সকাল ৮ টা থেকে জীপে টুরে যেতেন ফিরতেন প্রায় রাত ৮ টার সময় । কাজের চাপ বাডলে জঙ্গলের মধ্যেই টেন্ট ফেলে স্টাফেদের সঙ্গে থেকেযেতেন।সে যুগে মোবাইল ছিলনা যে কেউ খবর নেবে । তখন মাল্কানগিরি তে ইলেকট্রিসিটি আসেনি তাই সারাদিন অসহ্য গরম হত। হাত পাখা তখন একমাত্র ভরসা। ভ্যাপসা গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত । সারাদিন গরম আর রাতে মশা । লন্ঠনের আলো তে মা রান্না করতেন । মিশ্র রুটি করে চোলেযেত । মা রকমারি তরকারি তৈরি করে আমাদের খেতে ডাকতেন।
ছোডদি এসে ছিল ওখানে কারন, প্রথম সন্তান সম্ভবা । তাই ছোটজামাইবাবু, ছোড়দিকে মাল্কানগীরি তে বাবা-মা র কাছে ছেডে কিছুদিন থেকে কটকে ফিরে গিয়েছিলেন ।সেদিন ছিল জামাই ষষঠী। বেলঘরিয়া থেকে বড জামাইবাবু (বলাই) আর কটক থেকে ছোট জামাইবাবু (কেষ্ট) এসেছিলেন । বাবা মা’র জামাই খাতিরটা একটু বেশি ছিল সেদিন ।স্পষ্ট মনে আছে দুই জামাই কি খাবে না খাবে ,মা হেঁসেলে ঢুকলে আর বেরুবার নাম নেই। রকমারি ব্যঞ্জনে থালা র চতুঃস্পারশে পঞ্চ ব্যাঞ্জন মাছের কালিয়া,ছোলার ডাল দিয়ে মাছের মাথার মুডিঘন্ট , পাঁঠার মাংস, পাঁঠার মাঁসর দোপেয়াঁজী, ,মুর্গীর মাংস,শুক্তো, আমের চাটনি,মোচার ঘণ্ট, পোস্তর বডা ,পটল ভাজা, বেগুন ভাজা, কুমডোর ফুল ভাজা, আলু পোস্ত , ডিমের ডেভিল ,বাডিতে পাতা মিষ্টি দই, ছানার পায়েশ,রসগল্লা,সান্দেশ। “বলাই, কেষ্ট এটুকু খেয়ে নাও বাবা ” মা বলতেন সব খাবার বেডে । খাওয়া র পর ছোট জামাইবাবু পান খেতেন। জরদা দেওয়া পান আনতে আমাকে বাজারে ছুটতে হত সাইকেল নিয়ে । বিকেলে বাবার ড্রাইভার আসতো জীপ নিয়ে, দুই জামাই বাবাজিবন কে সান্ধ্য ভ্রমনে নিয়ে জাওয়ার জন্য। ড্রাইভার আগত্যা জীপে, জামাই বাবুকে নিয়ে তমশা নদী র তীর ওভধি নিয়েগিয়েছিল । বাবার অভিলাশ যদি বাবাজিবন কে live বাঘের দর্শন করানো যায় দুরথেকে। সন্ধান পাওয়া ত দুরের কথা , বাবাজিবনরা বাঘের মতন চক্ষু (হয়তো মোষের ) দূর থেকে দেখেই ব্যাশ্; ড্রাইভারকে গাডি ঘোরানর নির্দেশ দিয়ে হাঁপাচ্ছেন। আমাদের বাডিতে সর্বদাই হট্টগোল । বাবা বলতেন যারা ভেকু তারা চুপ করে থাকে আর নন ভেকুরা সোরগল করে । কথাটা এখনো আমার কানে বাজে । অত্যন্ত রসিক আর আমুদে মানুষ ছিলেন আমার বাবা। মা ঠিক উল্টো । গুরু গম্ভীর প্রকৃতির বাস্তব এবং দায়িত্য সম্পন্না,কর্মঠ মহিলা । ছেলে মেয়েদের প্রচণ্ড ভাল বাস্তেন দুজনেই । একজন স্নেহ দিয়ে আরেকজন শাসন করে । একটা কথা বলে রাখি তখন আমাদের মাসতুতো ভাই সন্তুদা বেশ কয়েক বছর বাবা মার কাছে ছিল । সন্তুদা খুব দুষ্টু ছিল । তখন আমাদের ছোট কাকা (ক্যাঁদন) পুরী থেকে বাবার কাছে এসেছিলেন মাল্কানগিরি তে । ওনার সামান্য মাথার দোষ ছিল । মানে খুব ছেলে মানুষ ছিলেন । খাওয়া ছাডা কিছুই যানতেন না । একবার মা বাবা কি কারনে বাইরে গিয়েছিলেন তখন ছোট কাকা, সন্তুদা আর আমরা দু ভাই ছিলাম বাডীতে । সন্তুদা,আমাদের বাডীর দুটো মোরগ বেশ প্রমাণ সাইজের জবাই কোরে প্রেসার কুকারে রান্না কোরলো ।ভালোই হয়েছিলো রান্না কারণ বাডীতে তেল মসলার তো অভাব নেই । তখন বাজে আঢ়াইটে । সকলের ক্ষিদেতে প্রাণ ওষ্ঠাগত । ছোট কাকা কে খেতে ডাকাতেই আসন পেতে পরিপাটী কোরে বসে পডলেন । কোইরে সন্তু মাংস কোথায় ? গোবিন্দ ভোগ চালের ভাত আর মুর্গীরমাংস। এলাহি ব্যাপার। কাকা খেয়েই যাচ্ছেন সন্তুদা দিয়েই যাচ্ছে । প্রায় তিন চতুর্থাংশ শেষ হোয়েগিয়েছে ততোক্ষনে । সন্তুদা এবার খেঁপে গেল। যা করল তা এখানে লেখা যাবেনা । আমাদের খুব ক্ষিদে পেয়েছিল । আমরা যে যার ভাত বেডে খেয়ে নিলাম। ঘটনার কথা মা এসে শুনে খুব রাগা রাগি করলেন।
দুর্গা পূজো এসে গেল । মা বাবার ইচ্ছা এবারের পূজোতে মার বাপের বাডী অর্থাৎ আমাদের মামার বাডী ‘খেপূতের’ পূজো দেখতে যাব সবাই । তখন আমাদের দাদু , বিজন বিহারী চক্রবত্তী জীবিত । আমরা মাল্কাণ গিরি থেকে সোজা জীপে জয়পুর ওব্ধি গেলাম। ওখান থেকে বাসে বিজয়নগরম্ । বিজয়নগরম্ থেকে ম্যড্রাস মেলে খডগপূ্র । তারপর লোকাল ধরে কোলাঘাট । কোলাঘাট থেকে গুপীগঞ্জ । গুপীগঞ্জ থেকে আডাঈ মাঈল পদব্রজে । তারপর খেপূত্। বিশাল পূজো দ্যাখার মতন । বোধন থেকে বিসর্জন ওভধি প্রত্যেকটা মুহূর্ত ভীডিও কোরে রাখার মতন । এখন ওরকম দুর্গা পূজো সচরাচর দেখতে পাওয়া যায়না । সবাই এই পূজোর সময় এক হয় গ্রামের বাডীতে । একটা উৎসবের মুহূর্ত চারিদিকে শরৎ এর কাঁসফুল। ক্ষেতে পাট ফসল কাটা হয়ে গিয়েছে। সেই ক্ষেতের ওপর হাঁটার সময় তখনকার গ্রাম বাংলার স্পষ্ট চিত্র । একটা পূজো পূজো আমেজ। মন মাতান পূজোর গান । মানবেন্দ্র, হেমন্ত, লতার পূজোর রেকর্ড বাজছে । গগন মুখরিত ।
খেপূতে তখন আমাদের একমাত্র মামা, মলয় মামা , আমার মাসতুত ভাই বোম্ভোলা, সন্তুদা , মঞ্জু(মাসি),ফূদাণ,টুটু(মাসি), মেজ দাদু, মেজ দীদা , দাদু, মা,বাবা, মেশোমোশাই, মাসিমা, আর আমাদের সব আত্মীয় স্বজন । একটা বিরাট গেট টু গেদার । পুজো যাকে বলে ঠিক সেইরকম হত । বনেদী বাডিতে যেরকম হায় ।
বানী ; আমাদের প্রথম ভাগ্নী । ওর মাল্কানগীরি তেই জন্ম।সালটা ১৯৬৩ জানুয়ারী মাসে । সরস্বতী পুজোর দিন বাণীর জন্ম । বাবা সাধ করে নাতনীর নাম ‘সরস্বতী’ কিন্তু সে নাম পছন্দ হলনা তাই নাম দেওয়া হল ‘অঞ্জনা’। বানী জন্ম থেকেই রোগা ছিল কিন্তু দেখতে ভীষণ সুন্দর কারন ওর বাবা মা দুজনেই সুন্দর।নাতনী র অনেক আহ্লাদ ছিল প্রথম সন্তান। সারা দিন ক্যাঁ কটরে পড়াশুনো হত কম আর গল্প আড্ডা বেশি। ছুটির দিনে বাবার সাঙ্গ পাঙ্গ দের আগমন এবং চা এর আড্ডা ছিল । রকমারি জলখাবার তৈরি হত।
মা রোজ বানি কে নিয়ে বেডাতে বেরুতেন । সবাই বলত “বানী মাল্কানগীরি কা রানী”। সে ছোট বেলা থেকেই মা কে বলত দিদুন, “চটি ছাতা ভোঁ” মানে পায়ে চটি পরে ছাতা নিয়ে বেডাতে চল । বানিকে দেখতে কটক থেকে ‘চিত্ত’ বাবু (ছোটজামাই বাবুর দূর সম্পর্কের ভাই) গলায় এক ন্যাসনাল প্যানাসোনিক জাপানী ট্রাঞ্জিস্টার নিয়ে হাজির। উদ্দেশ্য সোনাদার শ্বসুর বাডীতে ফাঁট দেখাতে আশা ।পেটে বিদ্যে অষ্টরম্ভা গুঁতো মারলে ‘ক’ বেরুবেনা সে হেন ভদ্রলোক কে, মা বাবা আপ্যায়নের ত্রুটি রাখেন নি । তা তিনি নেই নেই করে বেশ কদিন জামাই আদর খেয়ে প্রত্যাবর্তন করলেন স্বগৃহে । বাবার কষ্টার্জিত টাকা কিছু ভূতে এসে শ্রাদ্ধ করেগেছে আর আমরা নির্বাক দর্শক ছিলাম । কিছুদিন বাদে ছোটজামাই বাবু এসে ছোডদিকে নিয়েগেলেন । বাডি ফাঁকা। বছর ফুরয়নি আবার ছোডদি হাজির ছোটজামাই বাবুর সঙ্গে । রিনা আমার দ্বিতীয় ভাগ্নী হবে বলে ।
কখনো সখনো আমি বাবার সঙ্গে টুরে যাওয়ার বায়না করতাম যার সুবাদে আমি অনেক সুন্দর সুন্দর যায়গা দেখার সুযোগ পেয়েছি। যেমন; বালিমেলা, ওরকেল, কালিমেলা, মটু, পড়িআ, কুমটিগুড়া, গোবিন্দপালী, তমাসানদি, এম্ ভি ১৯,২১,৫১ ইত্যাদি । হরিনারায়নপুর(এই গ্রামটা বাবার নামে ) নামাঙ্করন হয়। তখন দন্ডকারন্য প্রোজেক্ট এ একজন চিফ এডমিনিস্ট্রেটার (আই সি এস্ ) অফিসার থাকতেন । তখন শ্রীসুকুমার রায়, আই সি এস্ , চিফ এডমিনিস্ট্রেটার , দন্ডকারন্য প্রোজেক্ট ছিলেন। উনি স্বর্গীয় বিধান রায়,তখনকার পঃবঃ র মুখ্য মন্ত্রী র খুব কাছের লোক ছিলেন । উনি বাবাকে খুব ভালোবাসতেন । আর বোধহয় সেই সুবাদে বাবার কাজের মূল্যস্বরুপ তখন ওই গ্রামের নাম ‘হরিনারায়নপুর’ রাখেন নিজে শ্রীসুকুমার রায়, আই সি এস্,এটাই ছিল বাবার সবচেয়ে বড় সন্মান । এখন এরকম কাজ পাগলা লোক সচর আচর দেখতে পাওয় ষায়না। আর এত অমায়িক এডমিনিস্ট্রেটার ও দুর্লভ । ওই দুর্ভেদ্য জঙ্গলে , সএল সার্ভে করার জন্য টেন্ট ফেলে থাকতে হত বাবাকে।অবশ্য বাবার নিরাপত্তার জন্য সরকারথেকে দুজন শিকারী (body guard)কে পোষ্টিং করা হয়েছিল । জঙ্গলে পদে পদে বিপদ কারন রয়েল বেঙ্গল টাইগার গোরু ছাগল খেতে আসতো । গরম কালে সন্ধ্যাবেলায় ভালুক এর আগমন পাকা আম খাওয়ার জন্য। এখন লোকে যা টাকা খর্চা করে দেখতে যান আমি, তা ছোটবেলাতেই দেখেছি বিনেপয়সায় । তাই আমার আর ওদিকে আকর্ষন নেই।
আমি প্রায় সব জঙ্গলি জীব জন্তু দেখেছি কিন্তু মানুষ আর ওদের মধ্যে প্রভেদ হল; ওরা ক্ষীদে পেলে খায়,মানুষ খায় খাওয়ার নেশায় । ওরা হিংস্র ঠিক কিন্তু ভুভুক্ষু নয় এই অমানুষের চেয়ে সেই পশুরা অনেক ভাল। ওরা শ্রীঙ্খলিত, বিশ্রীঙ্খল নয়। উন্মত্ত কিন্তু উন্মাদ নয়। এটাই মস্ত বড প্রভেদ জন্তু আর মানুষে । মানুষ ওন্নের মুখের অন্ন ছিনিয়ে খেয়ে নিজেকে বাহবা দেয় । পরে যাদের জন্য রাখে তারাই পশ্চাৎ দেশে পদাঘাত করে । এটাই বিধাতার নিয়ম
বাবা সারাজীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাদের মানুষ করেছেন। প্রত্যেকটা সামাজিক দায়িত্য সুচারু রুপে পালন করেছেন । মা অক্লান্ত্য পরিশ্রম করে নাতনীদের জন্ম থেকে বড করেছেন কিন্তু তার প্রতিদানে কিছুই আশা করেন নি। তারা বড হয়ে কখনো দাদু দিদার খোঁজ করেনি। অবশ্য ওদের দোষ নেই । দোষ ওদের মা বাবার। যারা আমার মা বাবার মৃত্যুর পরেও তাদের শুষে গেছে শেষ স্মৃতি টুকু তে ভাগ বসিয়ে , মুখের ভাত ছেলেদের মুখ থেকে কেডে নিয়েছে ।অঢেল থেকেও যারা লোভের বশবর্তী হয়ে ভাই দের বাসচ্যুত করে নিজেদের ভাগ বসায় তারা মানুষ রুপি জন্তু।বোধহয় মাল্কানগিরির জন্তুরা এদের চেয়ে যথেষ্ট ভাল ।
তখন পূর্ব পাকিস্থান থেকে কাতারে কাতারে লোক ঘর বাডি ছেড়ে স্ত্রী ,পুত্র, কন্যা,পিতা,মাতা, ভগিনী সহ শ্রেফ্ জান বা৺চিয়ে আসছেন; আর কেন্দ্র সরকার দন্ডকারন্যে তাদের আশ্রয় স্থল এর ব্যাবস্থা করছেন । সেই গুরু দায়িত্তের ৫০% কাজ বাবার দায়িত্ত ছিল। কারন পূর্ব পাকিস্থান(অধুনা বাংলা দেশের) লোকেরা পরিশ্রমি এবং ভালো কৄষক।তাই চাষোপযোগি উন্নত মানের কৄষীজমি নিরুপন একমাত্র উত্তম মৄত্তিকা সার্ভে দ্বারা নিরুপন করা সম্ভব । সেই গুরুদায়িত্তের কাজ বাবাকে দেওয়া হয়েছিল । বাবার অধীনস্থ দু জন সহকারী মৄত্তিকা সংরক্ষণ অধিকারী ,একজন সহকারি কৃষি যন্ত্রী এবং বরিষ্ঠ গবেসনা সহকারি ও কনিষ্ঠ গবেসনা সহকারি মিলিয়ে প্রায় একটা বড টীম ছিল । সকলেই দায়িত্ব সম্পন্ন এবং কর্তব্য পরায়ন । এক একটা জায়গায় জল পাওয়া যেতনা তার ওপর প্রখর রউদ্র তাপ সব মিলিয়ে এক কষ্টসাধ্য পরিবেশ তাও সকলের মুখে হাঁসি সেটাই আশ্চর্য্য। সবাই স্বতঃস্ফূর্ত কর্মে উদ্বুধ্য এবং একটি লক্ষ্য রিফ্যুজিদের যেন কোন অসুবিধে না হয়। সরকার থেকে যে বাসস্থান দেওয়া হবে সেটা যেন বাসোপযোগী হয় । চাষ আবাদ ভাল হয় । আজ সে সব যায়গা হা৺সছে । হা৺সছে হরিনারায়নপুর কিন্তু বাবা নেই বাবার কীর্তি আছে । আছে মার স্মৃতি সেই আম গাছ তাতে ফুল ফল সব আছে। আছে আমার দু চোখ ভরা জল আর স্মৃতির রোমন্থন। আজ বাবা মা কেউ নেই আছে কেবল তাদের স্মৃতি ।
****/ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জি /****
খডিলাগি একাদশী ১৫ ই জুন ২০১২
বাবার ২৬ তম শ্রাধ্য দিবস উপলখ্যে
No comments:
Post a Comment