Tuesday, November 19, 2024
বিশু খুডো
ত্রিভুবান জিৎ মুখার্জী
১৯.১১.২০২৪ মঙ্গলবার ।
আজ বিশু খুড়ো কে খুব মনে পড়ছে l আজ ওনার জন্মদিন । ওনার পুরো নাম শ্রী বিশ্বভূষণ ভট্টাচার্জী । আমরা প্রায় সকলে বিশু খুড়ো বলেই ডাকি । বিশু খুড়ো বিপত্নীক । বয়েস ৭৮ হল এখন চোখে ভালো দেখতে পারেন না । তাই মেজাজটা সর্বদা খিট খিটে । অবসরের পরে আরো খিট খিটে হয়ে গিয়েছেন । ঘরে মানুষ জন বলতে উনি আর ওনার এক নাতি । সে মাঝে মধ্যে দাদুর কাছে আসে কিন্তু পরক্ষনেই ফিরে যায় নিজ গৃহে । বিশু খুড়ো মানুষটা ভালো । কোলকাতা পোর্ট ট্রাস্টে চাকরি করতেন । একাউন্টস অফিসার হয়ে রিটায়ার করেন । রিটায়ারমেন্টের পর কলকাতায় একটা ছোট টু রুমের ফ্ল্যাট কিনে সেখানেই থাকেন । পেনশনের টাকায় ভালোই চলে উপরন্তু অবসর সময়ে সাহিত্য চর্চা চুটিয়ে করেন । অনেক ভালো ভালো কবিতা উনি উপহার দিয়েছেন সংগে রাজনৈতিক পর্যালোচনা, নাট্য সমালোচনা,গল্প উপন্যাস ইত্যাদি অনেক লেখা পরিবেষণ করে সুনাম অর্জন করেছেন । সুদূর বাংলাদেশ থেকে ওনার ডাক পড়ে সাহিত্য সমারোহে তা ছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওনাকে বিশেষ অতিথী করে নিমন্ত্রণ করা হয় । বিশু খুড়ো কিন্তু অত্যন্ত সাদা মাটা মানুষ এবং নিরঅহংকার ও বটে l একটা পুরোনো মোবাইল তাও রাবার ব্যান্ড দিয়ে আটকানো তার কভার । আমাদের বলেন কি হবে ঐ স্মার্ট ফোন নিয়ে ? আবাসনের অন্য লোকেদের সংগে সম্পর্ক ভালো । সবাই বিশু খুড়ো বলেই ডাকেন । পাড়ার ছেলে ছোকরারা বিশু খুড়ো কে কোনদিন মন্দিরে যেতে দেখেন নি । উনি কট্টর বাম পন্থী । মন্দিরে যাওয়াটা নাকি অশিক্ষিতের লক্ষণ । তাই শ্রাবণ মাসে শিবের মাথায় জল ঢালাটা ওনার মতে হাস্যকর এবং অযুক্তিকর ।
ঐ আবাসনের বয় জ্যেষ্ঠ সেক্রেটারি মহাশয়, শ্রী নীলকণ্ঠ সমাদ্দার বলেন শ্রাবণ মাস মানেই শিবের আরাধনার মাস l শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালেন অনেকেই ৷ নিজের সংসার, সন্তানের মঙ্গল কামনায় শিবের পুজো চলে পুরো শ্রাবণ মাস ৷ কথায় বলে দেবাদিদেব মহাদেব ৷ অর্থাৎ সব ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ শিব ! তিনি মহা যোগী, মহেশ্বর । সেই ঈশ্বরের পুজোয় সব মনস্কামনা পূরণ হবে ৷ শান্তি প্রাপ্তি হবে জীবনে এবং সংসারে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে । পুরাণ মতে এই শ্রাবণ মাসেই বিষ পান করেছিলেন মহাদেব ৷ বিষ পানের ফলে তাঁর সারা শরীর নীল হয়ে যায় ৷ সেই কারণেই তাঁর মাথায় জল বা দুধ ঢেলে পুজো করা হয় ৷ শ্রাবণ মাসের প্রতিদিনই এই আচার পালন করা হয় ৷ তবে যে হেতু সোমবার শিবের বার বলেই পরিচিত, তাই সোমবারেই বিশেষ পুজো হয় ৷ শ্রাবণ মাসের ৪টি বা ৫টি সোমবার ধূমধাম করে পুজো করা হয় ৷ প্রচলিত বিশ্বাস শিবের পুজোয় দূর হয় জীবনের সব সমস্যা ।
বিশু খুড়ো এই যুক্তি শুনে হেঁসে গড়িয়ে যান বলেন মূর্খের দলকে কি বলে বোঝাবো l ওরে শিব বিষ খেয়েছিলেন বলে কোন পুরাণে আছে ? শিব পুরাণে ! ও ওগুলো কিছু ব্রাহ্মণ নিজেদের রোজগারের জন্য অন্ধ ভক্তদের মগজ ধোলাই করে মগজে বিষ ঢেলেছেন । কাজ কম্ম কিছু নেই রাস্তায় লম্বা লাইনে জল নিয়ে গাড়ি মোটর বন্ধ করে ধর্ম অর্জন । লজ্যা করেনা । চাকরি করেছেন বটে তবে প্রায় নাকি খটা খটি লাগতো উপরিস্থ হাকিমের সংগে ।কথাটা শোনা তাই বিশেষ গুরুত্ব দিই না ঐ কথার ওপর । নিন্দুকেদের কিছু একটা রটালেই হল ।
একদিন শীতের সকালে বিশুদার বাড়ির কাজের মাসি বেল বাজিয়েই যাচ্ছেন কিন্তু দরজা আর খোলেনা । বেলা ১০ টা বাজলো তবুও দরজা খোলে না । কাজের মাসি সিকিউরিটি কে ডাকেন । সে এসে দর্জা ধাক্কায় কিন্তু কোন শব্দ হয়না । আবাসনের লোক জন জড়ো হতে আরম্ভ করেন । আমাদের আবাসনের সোসাইটির সেক্রেটারি শ্রী নীলকণ্ঠ সমাদ্দার মহাশয় আসেন ।দরজা ভেঙে সবাই ঢোকেন । সবাই দেখে অবাক বিশু খুড়ো অচৈতনি অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছেন । গায়ে জ্বর । উনি মেয়ের বাড়িতে একটা ফোন পর্যন্ত করতে পারেন নি বোধ হয় । তা নাহলে ওনার নাতি নিশ্চই চলে আসতো তার দাদুকে দেখতে । নীলকণ্ঠ বাবু ধার্মিক মানুষ । সংগে সংগে এম্বুলেন্স ডেকে বিশু খুড়ো কে হাঁসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন এবং ওনার মেয়ের বাড়িতে ফোন করেন । নীলকণ্ঠ বাবু প্রত্যেকের সংগে আন্তরিক সম্পর্ক রাখেন এবং আপদে বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন । এটাই ওনার মহানতা । তাই ওনেকেই সোসাইটির সেক্রেটারি করেন সবাই ।
যাইহোক ভগবানের দয়ায় বিশু খুড়োর করোনা টেস্টে নেগেটিভ দেখায় পরে ডাক্তারি চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরেন । ওনার মেয়ে নাকি বাবা তারকনাথের কাছে মানত করেছিলেন বাবার সুস্থতা কামনা করে । বাবা তারকনাথ শুনেছেন মেয়ের ডাক তাই বিশু খুড়ো সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরেন । এই কথা কিন্তু কিছুতেই মানতে নারাজ আমাদের বিশু খুড়ো । বলেন ওরে ঠাকুর যদি বাঁচাতেন তবে ডাক্তাররা আছেন কি করতে? মেয়ে বলে না বাবা ডাক্তাররাও মানেন এক ঐশ্বরিক শক্তি কাজ করে তাই তাঁরাও ভগবানকে ডাকেন অপারেশন করার আগে । পেসেন্টকে আশ্বাস দেন ভগবানের ওপর বিশ্বাস রাখুন আপনার রোগী নিশ্চই ভালো হয়ে যাবেন । আজ ঐ নীলকণ্ঠ জেঠু তোমার ফ্ল্যাটের দরজা না ভাঙলে তোমাকে আমরা বাঁচাতে পারতামনা, সে খেয়াল আছে! উনি ঈশ্বর বিশ্বাসী তাই তোমাকে ঈশ্বর ই বাঁচিয়েছেন এটা মাথায় রেখো । তিনি সর্ব শক্তিমান তাঁর ওপরে কেউ নেই । এখন থেকে একটু ঠাকুর পুজো কর । ব্রাহ্মণ সন্তান হয়ে গলায় পৈতে নেই তোমার, লোকে আমাকে যা তা বলে বিশু খুড়ো মেয়ের মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকেন আর তাঁর স্ত্রীর কথা মনে করেন... ঐ এক ই কথা তাঁর স্ত্রী বলতেন তাঁকে । বয়েস হয়েছে মেয়ের কথা শোনা উচিৎ মনে মনে ভাবেন কিন্তু না ঐ পৈতে ধারণ অসম্ভব । ওটা নতুন করে করা সম্ভব নয় ওনার কাছে । হ্যাঁ ঈশ্বর তিনি মানেন তবে তাঁকে আকারে সীমাবদ্ধ করতে নারাজ । তিনি নিরাকার পরম ব্রহ্ম ।এটাই তাঁর বিশ্বাস ।
**চিত্র ঋণ গুগুল**
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
Subscribe to:
Posts (Atom)