Wednesday, September 16, 2020

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী অনুগল্প বোরখা তারিখ ১৬.০৯.২০২০ বেলা ০১.২৭



 

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী




 সেদিন দিল্লি থেকে রাত ০২.১০ এর ফ্লাইট ধরে কলকাতা ফিরছি ইন্ডিগো বিমানে সঙ্গে আমার  সহধর্মীনি রাতে ফিরছি কারণ আর কোন টিকিট পাইনি রাত বারোটায় দিল্লীর ইন্দিরা গান্ধী বিমান বন্দরে এতো ভিড় দেখে আশ্চর্য হই মনে হচ্ছিলো যেন হাওড়া স্টেশনে ভুলে এসেছি দেখে খুশি লাগছে এখন বিমান পরিষেবা সাধারণ মানুষের আওতায় এসে গেছে কিওস্ক এ গিয়ে আমাদের দুজনের পিএনআরনাম্বার দিয়ে বোর্ডিং পাস বারকরে ইন্ডিগো কাউন্টারে যাই বিমানের টিকিট এবং গেট নাম্বার নি আধার কার্ড দেখিয়ে  সিকিউরিটি চেক এর জন্য এগোই সব জায়গাতেই লম্বা কিউ সঙ্গে লাগেজ বলতে আমার একটা ভিআইপিব্রিফ কেস আর ওনার একটা লেডিস হ্যান্ড ব্যাগ l কেবিনেই নেওয়া যাবে কারণ ছয় কিলো লাগেজ নিতে পারবেন আমাদের সঙ্গে সঙ্গে একজন বোরখা পরা ভদ্র মহিলা হাঁটছিলেন বোধ হয় একা কিন্তু মুসলিম মহিলারা প্রায় একা কখনো বাইরে বেরন না উনি একা দেখে মনেহলো কি জানি হয়তো সঙ্গে কেউ আছেন আমরা জানিনা জানার কথাও নয় l
এইসময় মহিলা জিজ্ঞাসা করলেন আপনারা কি কলকাতা যাবেন?
আমার স্ত্রী বললেন হ্যাঁ l
উনি বললেন আমি এয়ার পোর্ট থেকে আপনাদের সঙ্গে এক ট্যাক্সিতে যেতে পারিকিআমি একলা স্ত্রী লোক ফ্লাইট ভোর ০৪.১০ এ ল্যান্ড করবে নেতাজী ইন্টার ন্যাশনাল এয়ার পোর্টে অতো ভোরে একলা যাওয়া রিস্কি.....
দেখুন আমার ছেলে আসবে ওর গাড়ি নিয়ে আমাদের নিতে আপনি এয়ারপোর্টে একটু ওয়েট করবেন সকাল হওয়া অবধি তারপর সকাল হলে চলে যাবেন আপনার বাড়ি মহিলা একটু বিরক্ত হলেন আমার কথায় l
রাত দুপুরে ইন্ডিগোর বিমান সেবিকারা সুপ্রভাত জানান হ্যাঁ প্রভাত তো বটেই কারণ রাত বারোটার পর এএম., তাই সুপ্রভাত বলে টিকিট দেখিয়ে নিজের সিটের দিকে এগোই সিট নাম্বার 6A 6B.
নির্ধারিত সময়ের আগেই বিমানে যে যার নিজের সিটে বসে পড়ি সিট্ বেল্ট পরে একটা ইন্ডিগোর ম্যাগাজিন ওলটাতে লাগি l
কিছু বাঁধি গত আছে যা বিমান সেবিকারা বলে থাকেন সিট বেল্ট কেমন করে বাঁধবেনঅক্সিজেন মাস্কলাইফ জ্যাকেট আপাত কালীন বিপত্তিতে জরুরী বহির্গমন ইত্যাদি নির্ধারিত সময়ে বিমান টেক আপ করলো l
নির্ধারিত সময়ে বিমান অবতরণ করলো তখন ও অন্ধকার আছে কারণ শীতের দিন এমনিতেই কলকাতায় পলিউশন তাই একটা ধোঁয়াটে ভাব ছিল l আমাদের লাগেজ নেই তাই কনভেয়র বেল্টে যাওয়ার নেই সোজা হাঁটা দিলাম বহির্গমনের দরজার দিকে সেন্সর লাগানো দরজা তাই আপনা হতে খুলে যায় গেট নাম্বার টে অপেক্ষা করছি পেছন থেকে ঐ বোরখা পরা মহিলা.... একটু আঁতকে উঠলাম তারপর সামলে নিয়ে ছেলে কে ফোন করি বেচারা রাতে কাজ সেরে হয়তো ঘুমোচ্ছে তাই আর ফোন না করে একটা ওলা ট্যাক্সির জন্য এপ এ গিয়ে বুক করছি ঠিক ঐ সময় ছেলের কার এসে গেলো আর বুক না করে এগুচ্ছি ঐ সময় মহিলা এসে বলেন আপনারা কোন দিকে যাবেন?
কেন বলুনতআমার স্ত্রী বলেন l
না আমি একলা মহিলা বুঝতেই পারছেন......
-কি আশ্চৰ্য ওরকম কতো মহিলা একা যাতায়াত করেন আপনি ভয় পাচ্ছেন কেনআমাদের তাড়া আছে আসি বলে কারে উঠে পড়ে আমরা দুজনে l
রাস্তায় সিগনালে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের কার.... ঐ মহিলাকে আবার দেখি জেবরা ক্রস পার হতে  কি হোল চোখ কচলাতে কচলাতে দেখি হ্যাঁ উনি তো এই এয়ারপোর্ট থেকে এতো তাড়া তাড়ি এখানে কি করে এলেন আশ্চর্য ম্যাজিক নাকি?
আমরা দুজনে একে অপরের মুখের দিকে তাকাচ্ছিলাম ছেলে বলে কি হোল তোমরা চুপ চাপ কেন?
কিছু না বলি তুই গাড়ি চালা গাড়ি চালানোর সময় অন্যমনস্ক হতে নেই l
এবার আমাদের জানলার কাঁচের সামনে ঐ মহিলা !
আমি চোখ বুজে বলি অশরীরী আত্মা... ওদিকে তাকিওনা গাড়ি স্পিডে বেরিয়ে গেলো মহিলা আমার কাঁচের পাশেই বোরখা খুলে দেখালেন তাঁর একপাশ পোড়া মুখ সেদিকে চোখকান চুল কিছুই নেই সব জ্বলে গিয়েছে আমি চোখ বুজে রাম রাম জপ করতে থাকি এই সাত সকালে কোথা থেকে ভূত এলো?
ঘুমটা ভেঙে গেলো গিন্নির চায়ের কাপ এর সুন্দর দার্জিলিং টি র সুগন্ধে !!
কি বিড় বিড় করছিলে শুনি?
গিন্নির মুখের দিকে তাকিয়ে বলি আমি আমি কি ঘুমচ্ছিলাম?
হ্যাঁ লক ডাউনে ১৪ ঘণ্টা ঘুমচ্ছ আর রাতে কম্পিউটার এ কি বোর্ডে খট খট করে কি সব  লিখছ জানিনা বাপু....... !!


ঠাকুমা ক্ষুদ্র গল্প **লেখক ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী** ১৬.০৯.২০২০ বিশ্বকর্মা পুজো । বেলা ০১.২১


   

ত্রিভুনজিৎ মুখার্জী

 ঠাকুমা

প্রত্যেক দিন কাঁচের গ্লাসে গ্লুকোজের জল খাওয়ানোর সময় ঠাকুমার কানে কানে ঠাকুরদা কি বলেন শুনতে ইচ্ছে হয় l ক্ষনিকের জন্য তাঁর নিষ্প্রভ মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে আবার পরে ফিকে হাঁসিটা ঠোঁটের কোনে এসে অসহ্য যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকেন ঠাকুমা,  সেই ক্ষনিকের হাঁসিটা মিলিয়ে যায় পরক্ষনে l কিং কর্তব্য বিমূঢ় ঠাকুরদা ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকেন ঠাকুমার নিথর শরীরের দিকে l অশ্রুসিক্ত নেত্র থেকে টপ টপ করে পড়ে দু ফোঁটা অশ্রু l এই দেখে আসছে রীনা দিনের পর দিন l কেউ ডাকলে সাড়া দেন না  ঠাকুমা কিন্তু  ঠাকুরদা যখন গ্লুকোজের জল গোলান কাঁচের গ্লাসে ঐ শব্দ শুনে  একটু চোখ খুলে দেখেন ঠাকুরদাকে l   ঠিক সেই সময় ঠাকুমা মুখটা অনেক কষ্টে খুলে ঐ গ্লুকোজ এর  জল টুকু খান আর ঠাকুরদাকে কি যেন বলতে চেষ্টা করেন সেটা তিনিই বোঝেন l ওটাই বুঝি ঠাকুমার মৃত সঞ্জীবনী সুধা l এই চলছে বেশ কয়েক মাস l সারাদিন চোখ বুজে ঐরকম পড়ে থাকেন ঠাকুমা l কেউ কখনো ডাকলে সাড়াও দেন না কি ঘুরেও তাকান না l ঠাকুরদা ছাড়া কি কেউ ওনার কষ্ট বোঝার নেই? 

আশ্চর্য লাগে রীনার l ওর খুব ইচ্ছে করে কি এমন কথা ঠাকুরদা ঠাকুমার মধ্যে হয় যা ওদের দুজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ  l অন্য কেউ জানতে চাইলে ঠাকুরদা বলেন না, বরং গম্ভীর হয়ে বলেন ওগুলো তোমরা বুঝবে না l ওসব আমাদের আমলের কথা,  বলার সংগে সংগে ওনার চোখ ছল ছল করে ওঠে চোখের জলে l
রীনাকে এই নিয়ে ঠাকুরদাকে বিরক্ত করতে মানা করেন মা l বলেন ওদের বন্ডিং টা খুব পোক্ত l এখনকার ছেলে মেয়ে তোরা ওটা বুঝবিনা l ওটা ঐশ্বরিক প্রেম যা রাধা কৃষ্ণের মধ্যে ছিলো l ঐ প্রেমে কোন খাদ নেইরে l ওটা দৈহিক  নয় সম্পূর্ণ মানসিক বন্ধন একে অপরের প্রতি উত্তর দায়িত্ব   প্রকৃত ভালোবাসা যা এই যুগে বিরল l রীনাকে মা বলেন দেখো মা তোমার বাবা পৈ পৈ করে মানা করেছেন ঠাকুরদাকে যেন রীনা বিরক্ত না করে  l ওনার এমনিতেই মন খারাপ তার ওপর নানা প্রশ্ন করলে উনি আরো মনে দুঃখ পাবেন তার চেয়ে ওদের একা থাকতে দাও l 
কিন্তু রীনার কৌতূহল বেড়েই যায় দিন দিন l 
ঠাকুরদাকে রীনা বলে, ও দাদা তুমি কি বলছো ঠাম্মির কানে কানে  বলোনা ?
দাদা বলেন তুই কি বুঝবি রে মা আমাদের কথা ? ওটা আমাদের নিজস্ব l একান্তই নিজস্ব l  বেঁচে থাকার মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র l তোরা মেকি সভ্যতার আড়ালে
ভুলে যাস নর নারী ভগবানের এক অপূর্ব সৃষ্টি সেটা জৌবনের ক্ষুধা মেটানোর জন্য নয় রে মা সেটা ঐশ্বরিক প্রেম যা হৃদয়ের কোন থেকে সৃষ্টি তাতে আবেগ আছে মাধুর্য আছে তৃষ্ণা মেটানোর সুধা আছে l পরস্পরের আবশ্যকতাকে হৃদয় থেকে স্বীকৃতি দেয় প্রকাশ্যে নয় l সেটা বড়ই আপনার l  তোরা বুঝবিনা রে মা l তুই যা এখান থেকে l 
রীনা বোঝে তাই বোধ হয় যেদিন থেকে ঠাম্মি অসুস্থ দাদা ঠাম্মির কাছ ছাড়েন না l দাদা আগে কতো হাঁসি খুশি এক প্রাণবন্ত মানুষ ছিলেন l এখন উনি কেন এতো মুষড়ে পড়েছেন রীনা বুঝে উঠতে পারছেনা l ঠাম্মির অসুস্থতা দাদাকে অস্থির করেছে l  
 তবুও আশার আলোক ছাড়েনি দাদা l আঁকড়ে ধরে আছে তার পুরোনো স্মৃতি আর মাঝে মাঝে সেটাই বলেন ঠাম্মির কানে কানে l সে এক অদ্ভুত অনুভূতি দুজনের অনাবিল প্রেমের মুহুর্ত প্রস্ফুটিত হয় স্মিত হাস্যের মাঝে l তাতেই তারা পরিতৃপ্তি l ঝরে পড়ে অজানা অশ্রুধারা l কি সেই স্মৃতি ? রীনার কৌতূহল থেকে যায় l.........

ঠাকুমা
 শেষ পর্ব 
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

রীনার কৌতূহলের শেষ নেই l মাধ্যমিক  দিয়ে বসে আছে রেজাল্ট বেরুনোর অপেক্ষায় l রীনা নাছোড় বান্দা l দাদাকে জিজ্ঞাসা করে কি এমন কথা জমে আছে তোমাদের হৃদয়ে যা আজও প্রকাশ করতে পারোনি ঠাম্মিকে?
দাদা এই কথায় রেগে গিয়ে মাকে ডাকেন, বৌমা তোমার মেয়েকে এখান থেকে নিয়ে যাও l বড্ড পাকা মেয়ে l 
রীনা দাদাকে চুপ চুপ বলে ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করতে বলে l মাকে কেন ডাকছো? দাদার কাছে এসে হাত জোড় করে বলে, প্লিজ বলোনা দাদা ওরম  কেনো করছো? খাটের কাছে এসে দাদার মাথা টিপে দেয় l প্লিজ বলোনা দাদা, ঠাম্মির কানে তুমি কি এমন বলছো যে ঠাম্মি এতো কষ্টের মধ্যেও হাঁসছেন l যদিও হাঁসিটা ফিকে l

ওসব কি তোদের মতন মডার্ন মেয়ে বুঝতে পারবে রে মা l ওটা মনের কথা প্রাণের কথা সকলের জন্য নয় l ওসব আমাদের পুরোনো দিনের স্মৃতি l তুই কি বুঝবি সেসব আবেগের কথা, সেগুলো নিতান্ত ব্যক্তিগত কথা l
আজকাল স্বামী স্ত্রী যতই ডার্লিং বলে একে অপরকে ডাকুক না কেন তাঁদের মনের মধ্যে অনেক অমিল দ্বন্দ আবার মাঝে মাঝে একে অপরকে সন্দেহ করেন l ঐ সাহেবদের মতন সুইট হনি বলে ডাক  পরক্ষনেই  মানি মানি নিয়ে গন্ডগোল প্লেট  ছুঁড়তে ছুঁড়তে মেমসাহেব তার রাগের প্রতিক্রিয়া দেখাবে আর সাহেব বলবে কুল ডাউন বেবি কুল ডাউন l ঠিক তোদের এই প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা ঐ সাহেব ঘেঁসা হয়েছিস l ওরে মানি ছাড়া তোরা কিছুই বুঝলিনা l জীবনকে সুন্দর ভাবে উপভোগ করতে তোরা জানিস? কি করে জানবি বল বৌ গেল চাকরি  করে  টাকা রোজগার করতে বর গেল এঁটো  বাসুন মাজতে... ঘরে যদি বাবা মা আসেন তখন বুড়ি মাকে দিয়ে বাসুন মাযাবে রান্না করাবে l এইতো তোদের ব্যক্তি চরিত্র ! তোরা জানিস জীবনকে উপভোগ করতে l পারবি তোরা অসুস্থ স্বামীর  জন্য রাতের পর রাত জেগে থাকতে l তখন বাপের বাড়ি পালাবি নয় বাড়িতে সেন্টারের নার্স কে দিয়ে সেবা সুশ্রূষা করাবি l তার খরচ স্বামী দেবে l আসলে এই পৃথিবীতে মানুষের হৃদয় বলে বস্তু কমে যাচ্ছে l চারিদিকে পাপের আঁধার নেইকো কোথাউ আলো...... আর বলবোনা l 
রীনা বলে দেখলে দাদা  তুমি কেমন কায়দা করে আমার প্রশ্নের উত্তরটা এড়িয়ে গেলে l পারো বটে তুমি l আচ্ছা আমি তোমার কেউ নই ! বলে কেঁদে ফেলে l
- এই এই মোট্টে কাঁদবিনা মা l তা কেন মা তুই তো আমার ঘর আলো করা লক্ষী মা l তবে কি জানিস মা ঐ তোদের বয়েসের ছেলে মেয়েদের বেহায়া পনা রাস্তায় শপিং মলে ছেলে মেয়েদের বেলেল্লাপনা দেখে আমরা ভাবি... মনে হয়রে আমার অন্ধ হওয়া ছিলো ভালো l তোরা বলবি সময়ের সাথে এগোও ঐ পুরোনো দিনের স্মৃতি নিয়ে বসে থাকো তোমরা l না রে মা ওতেই আছে মাদকতা,আছে স্নেহের পরশ, আছে অব্যর্থ প্রেম যার তুলনা হয়না l তোর ঠাম্মি যখন আমার ঘরে আসে তখন আমি 400 টাকা মাইনে পেতাম l তারপর তোর বাবা আমাদের কোলে এলো l খুবই কষ্টে সংসার চলত কিন্তু তোর ঠাম্মি সব দুঃখ মাথা পেতে নিয়ে কি সুন্দর ঘর চালাতো l অবশ্য আমার শাশুড়ি মাতা অনেক করেছেন আমার সংসারের জন্য l তাঁর অবদান আমি কখনো ভুলবো না l তোর বাবা তো তার মামার বাড়িতেই বেশি সময় থাকতো l 
আমি শশুর বাড়ি ঐ জামাইষষ্ঠীতে যেতাম l এক পাল শালী l সবাই বলতো সিনেমা যাবো l কি করি বল অগত্যা প্রায় দেড়শো টাকা খরচ করে আমার শশুর বাড়ির কাছের সিনেমা হলে যেতাম l তখন এন্টার দি ড্ৰেগন সিনেমাটা আমার দেখার ইচ্ছে ছিলো l ব্রুশ লী র ছবি l খুবই চলে ছিলো সিনেমাটা l সিনেমার পর মৌচাকে কবিরাজি খাওয়া l সে তুই বুঝবিনারে মা বড় জ্বালা আমার পকেট গডের মাঠ l কিচ্ছুটি বলার উপায় নেই তাহলেই বিপদ l সংগে আমার অবশ্য স্টেট্ ব্যাংকের ট্রাভেলার্স চেক থাকতো l তখন তো আর এ. টি. এম. ছিলোনা তাই ওটাই ভরসা ছিলো l আমি জানি পকেটে টাকা থাকলে শালীদের নেক নজরে কর্পূরের মতন টাকা উবে যাবে l তাই কম টাকা রাখতাম  l 
এখন তোর ঠাম্মিকে দেখছিস এই রকম কিন্তু ও খুব সুন্দরী ছিলো l স্কটিশে পড়তো l আমরা খুব ঘুরতাম l আজ ভিক্টরিয়া কাল বোটানিক্যাল গার্ডেন পরশু বেলুড় মঠ, মা ভবতারিনীর মন্দির l সব ই ঐ বাসে ট্রামে l তোর ঠাম্মির শরীর খারাপ  হতে আমি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছি রে মা l তুই বলছিলিসনা কি বলি বলে !
আমি কি বলি জানিস: 

কাঁচের গ্লাসে ঢালি পানি
খাবে আমার রাধা রাণী
ভালো হবে ওষুধ খেলে
যাবো অনেক দূরে চলে
কেউ পাবেনা মোদের টিকি
ভালো হয়ে উঠে পড় দিকি 

 - এ কেমন বোকা বোকা কথা l বড্ড সেকেলে l বৌকে কেউ রাণী বলে ?
 - তবে কি বলে?
- সুইট হার্ট l 
- দেখ মা হার্ট টা যদি সুইট হয়  তবে তাতে পিঁপড়ে লেগে যাবে l ঐসব সুইট ফুইট নয় l ও আবার ডায়াবিটিস এর লক্ষণ l তুই যা তো আমাকে একা থাকতে দে l 
- দাদা তুমি কি সবদিন ঠাম্মিকে কবিতা শুনিয়ে খাওয়াও l
 - না সে কবিতার বড় ভক্ত আমার এই ছেঁদো কবিতায় তার মন ভরেনা l তবুও আমার কথার সম্মান দেয় যাতে আমি মনে দুঃখ না পাই l ওটাই আমার কাছে বড় পাওয়ারে মা l 
তোদের কাছে যা কবিতা আমাদের কাছে সেটা মনের এক তারা l ঐ এক তারার তান শুনলে ও ফিরে তাকায় l ও জানে আমি কোনদিন কবিতা লিখতে পারিনা তাও কিন্তু ও কোন প্রতিবাদ করেনা l আমাকে উৎসাহ দেয় মাথা নাড়িয়ে l এই বলে দাদার চোখ থেকে জল পড়ে l
গান শুনতে ও খুবই  ভালোবাসে কিন্তু সেগুলো প্রায় রবীন্দ্র সংগীত l আমিতো কচু পোড়া জানি l আমি তাই শচীন কর্তার গান শোনালাম l

মন দিলোনা বধূ
মন নিল শুধু
আমি কি নিয়ে থাকি?

অনেকদিন পর ঠাম্মির মুখে একটু কথা বেরুলো l অভিযোগের সংগে দাদাকে বললেন, একি তুমি এসব কি বলছো বাচ্চা মেয়েটাকে ? এগুলো আমাদের ব্যক্তিগত কথা ওকে বলোনা l ও বাচ্চা মেয়ে এসব কি ওকে বলা উচিৎ l
দাদা খুশিতে নেচে ওঠেন ঐটুকু কথা শুনেই বলেন তোর ঠাম্মি কথা বলছে তোর ঠাম্মি ভালো হয়ে গিয়েছেন l 
এতদিন হোল ও আমার সংগে আছে কিন্তু কোন দিন কোন প্রতিবাদ করেনি কি ওর কোন চাহিদা রাখেনি l আমার সংগে তাল মিলিয়ে চলেছে l এই প্রথম ওর মুখে প্রতিবাদের সুর শুনলাম l আমি কিন্তু খুব খুশি ও সেরে গিয়েছে এবারে উঠে বসবে কি বলো ? তাইতো?
ওষুধ ঠিক কাজ করেছে l দাদা খুশিতে সারা ঘর নেচে বেড়ান আর ঠাম্মি মুখে হাত দিয়ে উঠে বসেন l 
রীনা লাফ মেরে মায়ের কাছে যায় খবরটা দিতে l ঠাম্মি সেরে উঠেছেন l দেখবে এসো মা l...........
          *************