Monday, December 31, 2018

অণু গল্প নয়নতারা লেখকঃ ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী গল্পগুচ্ছ ৮ম বর্ষ ৫ম সংখ্যা ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ।। ১০ই পৌষ ১৪২৫



অণু গল্প নয়নতারা 










ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী
পুজোর প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ছোট্ট মেয়েটি ঘুরে বেড়াচ্ছিল আপন মনে. সংগে একটা বড় 
বেলুন. সংগে কেউ  বলে মনে হলনা. পরিচিত কেউ ওকে খুঁজছে এমন ও নয়. 
তবে কি মেয়েটা একা!
কাছে গিয়ে বলি তোমার নাম কি?  
কোন উত্তর নেই!
একটু কাছে গিয়ে কানের কাছে মুখ রেখে একই প্রশ্ন করি. তবুও কোন উত্তর নেই. 
কি আশ্চর্য মেয়েটা কি তবে কালা?  
কৌতুহল হল মেয়েটির বিষয়. 
আমাকে কিছু বলতে দেখে মেয়েটি মুখে হাত দিয়ে তার ডান বৃদ্ধাংগুষ্ঠি নাড়ায়
 পরে আবার কানের কাছে নিয়ে ওই একই ইশারা করে. ফ্যাল ফ্যাল করে আমার মুখের দিকে তাকায়. 
আমি বুঝি মেয়েটি বোবা কালা. 
ভারি মুশকিল আমি কি করে ওকে বোঝাই আমার মনের কথা?  
মেয়েটি আমার কাছে কি মনে করে আসে তারপর ইশারায় বোঝায় তার বাড়ি ওই দিকে. 
আমি দু হাতে চালা করে বোঝাই তোমার বাড়ি? 
- মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়. মানে হ্যাঁ.
- আহারে কত কষ্ট এই নিষ্পাপ শিশুটির মনে.কিন্তু কে তার বাবা মা? 
- মেয়েটি আমাকে কিছু বলতে চায় যা দেখে আমি বুঝি ও ওর বাড়িতে নিয়ে যেতে চায়.
- একেই বলে শিশু যে আপন পর বোঝেনা. বলি চল... হাত দেখিয়ে বলি চল.
- গুটি গুটি পায়ে এগোই ওর পিছু পিছু.
- এক পরিত্যক্ত মোটর গ্যারেজের মধ্যে এক বৃদ্ধাকে দেখি সেলাই করতে. 
একটা ছোট্ট আলো জ্বলছে. বৃদ্ধা ছুঁচ সুতো নিয়ে আপন মনে কি সেলাই করছেন.
- আমাদের দেখে চকিত আমার মুখপানে তাকিয়ে বলেন, কে তুমি বাবা? 
- যাক ইনি কথা বলতে পারেন তাহলে.আমি বলি মাসি আমি তোমার নাতনী কে একা একা
 ঘুরতে দেখে নিয়ে এলাম তোমার কাছে.ওকে এখানে ছেড়ে দিয়ে আমি ফিরে যাব আমার ঘরে.
- ও আমার নাতনী নয়. ওকে আমি এক মেলায় পেয়েছিলাম.ও এই রকম একা একা ঘুরছিল. 
অনেক জিজ্ঞ্যেশ করেও ওর বাড়ির ঠিকানা পাইনি. জতটুকু ঠারে ঠোরে বুঝি ওর বাবা মা কেউ
 নেই ও প্রায় অনাথ.কার সংগে এসেছিল তাও বুঝিনি.দিনকাল যা খারাপ ওই মেয়েকে কেউ বদ উদ্দেশ্যে চুরি করে নিয়ে যেতে পারে তাই আমার কাছে নিয়ে এলাম.প্রায় তিন   মাস  হয়ে গেল কেউ খোঁজ খবর করে নি.
 ভাবলাম থানায় দিয়ে আসি কিন্তু থানায় নিয়ে যাচ্ছি বুঝতে পেরে  ও ভয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে. 
আমার মনে হয় ওর থানায় ভয় আছে.
- মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে কি বলতে চায়.
-আমি বলি কিছু খাবি? 
-মাথা নাড়িয়ে বৃদ্ধার দিকে হাত দেখিয়ে বলে ও দেবে খেতে.
- মেয়েটিকে দেখে মনে হচ্ছিল নিশ্চই বড় ঘরের মেয়ে.অবহেলায় আছে জামা কাপড় খুব ই সাধারন,
মাথার চুল উস্কো খুস্কো কিন্তু মুখের হাঁসি আর চোখ দুটোই বলছে নিশ্চই কোন সম্ভ্রান্ত বঁশের মেয়ে .
হয় হারিয়ে গিয়েছে নয় অন্য কোন কিছু রহস্য আছে.
- আমি ত ফেলুদা নই কি ব্যোমকেশ বক্সি নই যে রহস্যের উৎস জেনে তার পেছনে ঘুরে কিছু সুরহা
 করব !
- কি করাযায় এই নিষ্পাপ শিশুটির জন্য.চাইল্ড হেল্প লাইনে ফোন করলে হয়. নেট সার্চ করে নাম্বার
 পেলাম.ওর ফটো মোবাইলে তুলে হোয়াটস এপ এ পাঠালাম. রিপ্লাই এলো. আমরা পৌঁছচ্ছি.
বৃদ্ধাকে বলাতে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন. তোমাকে কে বলেছে ওই সব করতে.ও আমার কাছে 
আছে আমার কাছেই থাকবে.
- আমি বলি মাসি ও ওখানে অন্য ছেলে মেয়েদের সংগে ভালো থাকবে.তুমি কি চাওনা মেয়েটি 
ভালো থাকুগ?
- আমি একা একা এই গ্যারেজে থাকি.আমার কেউ নেই.  ও থাকলে আমার ভালো লাগে.যা 
রোজগার হয় তাতে ওর আমার চলে যায়.
- কিন্তু এরকম ক দিন চলবে? তুমি কি সবদিন ওর কাছে থাকবে? 
- তা কেন বালাই সাঠ. 
- এর মধ্যে পুলিস এবং চাইল্ড লাইনের কিছু সমাজ সেবিকা এসে হাজির.
-বৃদ্ধাকে নানা প্রশ্ন করেন. বেগতিক দেখে মেয়েটি বৃদ্ধাকে জোড়িয়ে ধরে বোঝায় ও ভালো.

মেয়েটিকে চাইল্ড হেল্প লাইনের ম্যাডাম  রা মুক বধিরদের বোঝার মত ঠারে ঠুরে কি সব জিজ্ঞাসা 
করলেন. মেয়েটি যা বুঝলো তার উত্তরে বলে ওর মা বাবা কেউ বেঁচে নেই ওকে পুলিস ধরে নিয়ে
 গিয়েছিল কিন্তু ও সেখান থেকে পালিয়ে এসেছে. পুলিসকে কেন মেয়েটি ভয় পায় বোঝা যাচ্ছেনা.
 বৃদ্ধাকে আঁকড়ে ধরে বলে ও ওই মাসির কাছেই থাকবে. 
তবুও চাইল্ড লাইনের ম্যাডাম রা নাছোড় বান্দা. ওকে অনেক বুঝিয়ে নিয়ে যান তাঁদের সংগে. 
আমি নিশ্চিন্ত হলাম. 
পরের দিন আমার কাছে ফোন এল 
একটু আসুন বিশেষ প্রয়োজন.  আমি ভাবি আবার কি হল?  
গিয়ে দেখি অবাক কাণ্ড মেয়েটি না খেয়ে আছে গত কাল থেকে. তার এক জেদ মাসির কাছে যাবে. 
কিন্তু মাসির সম্পর্কে পুলিশের তথ্য খুব একটা ভালো নয়. মাসি চুরীর দায়ে জেল খেটেছে. 
এখন অবশ্য ওঁর বিরুদ্ধে কোন অভিজোগ নেই. 
মেয়েটি কেন মাসির কাছেই থাকতে চায় ওই গ্যারেজে সকলে চিন্তা প্রকাশ করে এবং আমার 
সাহায্য চায়. 
একে মেয়েটি প্রতিবন্ধী তার ওপর অনাথ. একটু ভূল হলে বেচারিকে আমাদের ভূলের মাসুল দিতে হবে. 
আমি একটি প্রস্তাব দি... আচ্ছা ওকে কি  আদ্যাপিঠের আশ্রমে রাখা যেতে পারে. ওখানে অনেক 
বাচ্চা পড়াশুনো করে খেয়ে পরে ভালো থাকে. আদ্যামায়ের আশ্রম খুব সুন্দর. যদি কিছু টাকার
 প্রয়োজন হয় আমি দিতে রাজি কিন্তু ও  ওখানেই ভালো থাকবে আমার মনে হল. মায়ের আশ্রয়ে থাকলে মা' ই ওকে রক্ষা করবেন.  মা করুণাময়ী, মা রক্ষা কালী,  মা' র করুণা পেলে জীবন ধন্য হবে. 
শেষে তাই হল. আদ্যাশ্রমে ওকে ছেড়ে আসা হল. বাচ্চাদের সংগে থেকে ও খেলা করবে কিন্তু ওর
 শিক্ষা?  আরে ওটা ত চিন্তা করিনি?  আশ্রমের পরিবেশ অত্যন্ত মনোরম. শান্তির বাতাবরন. 
এখানে শিক্ষা পাবে নিশ্চিৎ. 
ফিরে এলাম ঘরে. মনটা ভারাক্রান্ত মেয়েটির জন্য. আমার কন্যা সন্তান নেই তাই বোধ হয় 
একটি কন্যার প্রয়োজন আমার. কিন্তু আমি নিজেকে বোঝাই ও আশ্রমে থাকলেই ভালো থাকবে
 এবং শৃঙ্খলিত জীবন ওর চলাপথ সুগম করবে. তাই ওর ভালোর জন্য সব মায়া ত্যাগ করে 
ওকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করে ঘরে ফিরি...... 


Thursday, November 22, 2018

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী দ্বারা লিখিত অণু গল্প জোঁক





৮ম বর্ষ ২য় সংখ্যা ৪ নভেম্বর ২০১৮ ।

এই সংখ্যায় ১০টি গল্প । লিখেছেন অমিতাভ দাশ, সুবীর রায়, নীহার চক্রবর্তী, চন্দনলৃষ্ণ পাল, অঞ্জন সরকার, পার্থ রায়, সুদীপ ঘোষাল, কৃষ্ণা দাস, ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ও তাপসকিরণ রায় ।

          সূচিপত্রে লেখকের নামে ক্লিক করে পড়ুন

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

জোঁক

মিতা মাসি আমাদের বাড়ির সামনেই থাকেন একটা ছোট্ট ঘরে । আপন জন বলতে তাঁর মেয়ে দোলা তার দুই ছেলে মেয়ে এবং জামাই নন্টে । নন্টে কাজ প্রায় কিছুই করে না.একটা ইলেকট্রিক দোকানে কাজ করত । ছোট খাটো কাজ ধরুন সিলিং ফ্যান লাগানো,টিউব ফিটিং,পূজোর সময় লিচু বালব লাগানো ইত্যাদি.বড় ধরনের কাজ করতে গেলে মাথার দরকার.সেটা নন্টের নেই । এই নন্টের খপ্পরে পড়ে দোলার জীবন ওষ্ঠাগত.এক ছেলে এক মেয়ে কে মানুষ করতেদোলা যায় বুটিকের দোকানে.মিতা মাসির হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম আর দোলার রোজগারে ওদের সংসার চলে। 
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজোর দিন নন্টেএল..ডি লাইট ফিটিংয়ের জন্য ডাক পায় পাড়ার পূজো প্যান্ডেলে.নন্টের কাজের চেয়ে অকাজ বেশি সবাই জানে তবুও মিতা মাসির মুখ চেয়ে পাড়ার ছেলেরা ওকেই ডাকে ছোট খাট কাজে.. যদি ওর কিছু রোজগার হয়মিতা মাসি মুখে কিছু বলেন না নাতি নাতনীর মুখ চেয়ে.দোলা তার বরকে চেনে । পকেটে টাকা পড়লেই সাকি সুরাতে অর্থ অপব্যয়.সুধু তাই নয়তার ওপর অকথ্য শারীরিক নির্যাতন যেগুলো ভাষা দিয়ে বোঝান যায়না । দু পয়সা রোজগারের ক্ষমতা নেই কিন্তু ফুর্তির শেষ নেই ।  এই দুপেয়ে জোঁক কে দোলা মিতা মাসি বহুদিন সহ্য করছে.ছেলে মেয়ে বাপের কাছ ঘ্যাঁেসনা কারণ ওই অপদার্থ অমানুষ টির ওপর কেউ বাড়ির সন্তুষ্ট নয়।  ছেলে মেয়ের টিফিনের টাকায় যদি তাদের পিতৃদেব সুরা পান করে আসে তবে কোন ছেলে মেয়ে সেই পিতাকে মর্যাদা দেবে?আমাদের ভারতবর্ষে এইরকম পিতার সংখ্যা যদি গণনা করা যায় তবে গণনা কারির মাথা গরম হয়ে যাবে  দিন আসে দিন যায় মিতা মাসির বয়েস বাড়ছে.গায়ে গতরে আর খাটতে পারছেন না.এদিকে দোলা আবার অন্তঃসত্ত্বা । এই পরিস্থিতে মিতা মাসিদোলার গর্ভ নষ্ট ছাড়া আর অন্য উপায় দেখলেন নাডাক্তার খানায় তাকে নিয়ে গিয়ে ডাক্তার বাবুর পরামর্ষে এম.টি.পি করান । কিছুদিন পরে ট্যুবোক্টমি অপারেশন করে পরিবার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন করেন । কিন্তু দোলা এই কষ্ট সহ্য করতে পারেনা.সে বেচারি অসুস্থ হয়ে পড়েনন্টের কোন হুঁস নেই । ছেলে মেয়ে দুজনেই মায়ের যত্ন করে । ছেলেটি মাধ্যমিক পাসের পর ছোট খাট টিউসন করে.তাতে যা  পায় পড়ার খরচ চালায়.সবচেয়ে বড়কথা ছেলে মেয়ে দুটোই স্বভাবে এবং পড়াশুনোতে খুব ই ভালো ।
নন্টে পাড়ার ছেলেদের এই নিয়ে গর্ব করে বলে তার ছেলে মেয়ের কথা ।
সকলে বলে নন্টে দা তোমার ভাগ্য ভালো তুমি এইরকম হীরের টুকরো সন্তান পেয়েছ । নন্টে মাথা নাড়ায় আর বলে হুঁ তা ঠিক ।
 
 এর মধ্যে নন্টে কোথায় উধাও হয়ে গেল। কেউ জানেনা কেউ খোঁজ ও করে না। কার  দরকার ই বা কি আছে ! 
এর মধ্যে দোলা একটু সুস্থ হয়ে আবার কাজে যেতে আরম্ভ করে। নন্টে না থাকাতে যেন পাড়া ঘর দুই শান্তিতে আছে। যে যার কাজে ব্যস্ত। মিতা মাসি একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন । দোলা যেন মনে মনে ভাবে আপদ গিয়েছে ভালো হয়েছে । তবুও তার মন সাড়া দেয় না । যতই হোক স্বামী ত। কি জানি কি খাচ্ছে কোথাও মদ গিলে বসে আছে কিনা !
হটাত এক দিন নন্টে এক মহিলা কে নিয়ে হাজির। ঘরে ঢ়ুকে বলে এ আমার নতুন বৌ । আজ থেকে এ আমার কাছেই থাকবে।
সকলে প্রথমে হতভম্ব হয়ে মহিলাটির দিকে তাকায় তার পর দোলা রান্না গর থেকে একটা কাটারী 
নিয়ে মহিলাটিকে তাড়া করে। 
মহিলাটিও ছাড়ার পাত্রী নয় । সে ও তেলুগুতে কি সব বলে দোলার দিকে তেড়ে আসে। এই সময় দোলার দুই ছেলে মেয়ে একটি লাঠি এবং ছাতা নিয়ে বেদম পেটায় তাদের বাবা এবং নতুন নবাগতা মহিলাটিকে। কিছু বোঝার আগেই পাড়ার ছেলেরা খবর পেয়ে মিতা মাসীর বাড়ীতে এসে ওই মহিলাটিকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়।
নন্টে মার খেতে খেতে বলে তোদের সব কটাকে জেলে পুরবো দাঁড়া । মিতা মাসী ওই সময় এক খাবলা নুন এনে নন্টের মুখে গুঁজে দিয়ে বলেন তোর মতন জোঁকের মুখে ভাত না দিয়ে নুন দেওয়া উচিৎ ।
পাড়ার সব ছেলে মিলে নন্টে আর ওই মহিলাকে মেরে তাদের পাড়া থেকে বার করে দেয়। নন্টের সাহস এবং নচ্ছারমি দেখে সকলে আশ্চর্য হয়। সকলে এক সঙ্গে বলে ওঠে জোঁকের মুখে নুন ।
পরে জানা যায় ওই মহিলা খড়গপুরের গণিকা পল্লীর এক গণিকা।
দোলা থানায় গিয়ে নন্টের নামে ডাইরি করে এবং পরে নন্টেকে ডিভোর্স করে উকিলের পরামর্ষে । এখনএই পাড়াতেও শান্তি আর মিতা মাসীও শান্তিতে আছে ।

আমি ছিলাম ... আমি আছি .... আমি থাকবো ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী





 'গল্পগুচ্ছ'



 

৮ম বর্ষ ৩য় সংখ্যা ১৯ নভেম্বর ২০১৮ অগ্রহায়ন ২, ১৪২৫

এই সংখ্যায় ৯টি গল্প লিখেছেন : অমিতাভ দাশ ( ব্যাঙ্গালোর), সুবীরকুমার রায়, সুদীপ ঘোষাল, তাপসকিরণ রায়, দীপলেখা মুখার্জী, মৌ সেন, রত্না ঘোষ, ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী ও সুমনা সাহা ।

            সূচিপত্রে লেখকের নামে ক্লিক করুন

ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী


আমি ছিলাম ... আমি আছি .... আমি থাকবো

  দিলুদা । আমার নিজের পিসতুতো দাদা। দুর্গ রেলওয়ে ষ্টেশনের ইয়ার্ড মাষ্টার ছিলেন। সংসারের সমস্ত দায় দায়িত্ব একা ঘাড়ে নিয়ে কখন যে তাঁর বয়েস হয়ে-গিয়েছিল বুঝতেই পারেন নি । ছোট ভাই বোনেদের পড়ান তাদের বিয়ে দেওয়া সব দিলুদা এবং ছটুদার ওপর ন্যস্ত করে ছোট পিসেমোসাই পিসিমা পুজো আচ্ছায় মন নিবেশ করতেন। সবকটি ছেলে মেয়ে প্রতিষ্ঠিত । দিলুদা অত্যন্ত  সাহসী ছিলেন। কালি পুজোর ছুটিতে মাঝে মধ্যে আমাদের বাড়িতে  আসতেন। বড় মামী (আমার মা) বলতে অজ্ঞান। মা দিলুদা কে খুব আদর যত্ন করতেন। সে সব দিনের কথা ওই স্মৃতিতেই থেকে গেল...... 

  ভুত চতুর্দশীর দিন দিলুদা আমাদের নানান ভুতের গল্প বলে স্তম্ভিত করে দিতেন। আমার চেয়ে ১৫ -১৬ বছরের বড় দিলুদা। আমরা কুঁচ কাঁচা ভাই বোনেরা ওনার মুখে ভুতের গল্প  শুনতে যেমন কৌতূহল  ছিল ঠিক সেইরকম ভয় ও পেতাম। তখন কার দিনে না ছিল টিভি না ছিল স্মার্ট ফোন। ওই বড়দের মুখে গল্প শোনাই ছোটদের একটা মস্ত আমোদ প্রমোদের উপায়।

একবার পুরীতে আমাদের বাড়িতে দিলুদা এসেছিলেন কোন কাজে । কথায় কথায় বলেন আরে ভুত বলে কিছু জিনিষ নেই। ওটা তোদের মনের ভুল। চল আমাকে কেউ যদি ভুত দেখাতে পারিস আমি তোদের সকলকে একটা সিনেমা দেখাবো। এই বলে আমাদের একটা ইংরাজি দিলুদার ইংরেজি উচ্চারণ খুব সুন্দর ছিল । আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনতাম আর ভাবতাম কি করে দিলুদা এত কাজের মধ্যে এত সুন্দর গান করেন !

পুরীতে ১৯৬৪-৬৫ সালের কথা বলছি , ভুত-কুঠি বলে একটা বিরাট লাল রঙের প্রাসাদ ছিল পুরী চার্চের পাসের রাস্তা দিয়ে যেতে হত সেখানে। কেউ থাকতো-না সেখানে। একটা উঁচু ঢিবির মতন বিরাট ভূখণ্ডের ওপর প্রাসাদ । ওখানে কেউ গেলে হয় পাগল হয়ে ফিরত নয় হার্ট ফেল করে মারা যেত । দিলুদাকে সেই কথা বলাতে তৎক্ষণাৎ বললেন চল আমি যাবো ওখানে দেখি ব্যাটা কোন ভূত আছে ওখানে ! মা , কাকিমা দুজনে শুনতে পেয়ে দৌড়ে এসে পড়েন । মা , দিলুদাকে বলেন তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে? কিছু হলে আমরা কি জবাব দেব তোর  মা বাবাকে ! বাচ্চা ছেলেদের কথায় ওমনি সাহস দেখাতে যাচ্ছিস । খবরদার ওখানে যাওয়া চলবেনা । কাকিমার ও ওই এক কথা। মাকে দিলুদা সত্যি খুব শ্রদ্ধা ভক্তি করতেন। মায়ের কথা অবাদ্ধ হতেন না। মা পারলে দিলকে( দিলুদা কে মা ওই নামে ডাকতেন)র কান মূলে  দিতেন।
বড় মামি .. তবে আমার একটা সর্ত আছে।
কি বল ?
আজ তবে পেট ভরে মাংস ভাত খাব ।
এই কথা তবে তাই হবে দাঁড়া আমি সকলের জন্য মাংস আনাই।  কথাটা শুনে মা নিশ্চিন্ত । বাজারের থলে হাতে বড়দা গেল মাংস আনতে । দিলুদার জন্য আমরাও বেশ মাংস ভাত খাবো । গরীবের ঘরে তখন ওটাই বিলাসিতা ছিল।
খাওয়া দাওয়ার পর সিগারেট টানতে দিলুদা লক্ষ্মী টকিসের সামনে মণিয়ার পানের দোকানে  চলে জান। ওখানে ওই লালকুঠির কথা জিজ্ঞাসা করাতে লোকে বলে ওখানে কেউ যায়না । ওটা ভুত-কুঠি । ওর অনেক ইতিহাস আছে। এখানে বলে রাখি পুরীতে অনের বাঙালিদের বড় বড় বাড়ি ছিল এখন ও আছে। ওই ভুত-কুঠি সেরকম ই কোন জমিদারের বিরাট অট্টালিকা হবে । তবে পরিত্যক্ত অবস্থায় এবং অবহেলিত অবস্থায় ওই ভুত-কুঠি এক  জন-  মানব শূন্য অট্টালিকা যার ইতিহাস কেউ জানেনা ।   
দিলুদার মাথায় ভুত চেপে বসল । এক জেদ মাকে না জানিয়ে ওই ভুত-কুঠিতেই যাবেন ।   যেমন কথা তেমন কাজ । মেজ কাকার পাঁচ সেলের টর্চ নিয়ে চললেন বাবু । কাউকে কিছু বলা নেই কওয়া নেই । আমাদের ও বলেননি পাছে আমরা মাকে বলে দি। বোঝ ঘটনা কোন দিকে মোড় নিচ্ছে। 
মণিয়ার দোকান থেকে এক বাচ্চা ছেলে আমাদের বাড়ি এসে বলে ,  বাবু বাবু সেই বাঙ্গালী বাবু তোমাদের বাড়িতে যে এসেছে সে ভুত-কুঠিতে যাচ্ছে।
মা রেগে লাল। কোথায় গেল দিলকে ?
সকলে মিলে ছুটলাম ওই লাল কুঠি র দিকে।
ও হরি কে কার কথা শোনে ? কোথায় দিলুদা ?
শেষে থানায় গিয়ে খবর দেওয়া হল । দুজন কনস্টেবল আমাদের সঙ্গে এলেন থানা বাবুর কথায়। মেজ কাকা পুরীর রেভিন্যু ডিপার্টমেন্টে কাজ করতেন তাই ওরা শুনে সাহায্যের হাত বাড়ায়। 
কনস্টেবল দুজন ভয়ে ভয়ে হাতে টর্চ নিয়ে যায় দিলু বাবুকে খুঁজতে । ওরা যা দেখেছিল তাই বলছি । দিলুদা অজ্ঞান হয়ে ঘরে পড়েছিলেন। টর্চ টার কাঁচ ভেঙ্গে গিয়েছিল । বাবুকে চ্যাং দোলা করে আনাহয় । চোখে মুখে জলের ঝাপটা দেওয়াতে জ্ঞান ফেরার পর বলেন , “আমি ছিলাম ..আমি আছি ..আমি থাকব তোরা চিন্তা করিস না । কথাটার কোন মানে বুঝলাম না  । আমরা সকলে ভাবলাম দিলুদা বোধ হয় পাগল হয়ে গেল। কিন্তু না । উনি সেরকম কিছুই হন নি  সুধু বলেন হ্যাঁ যায়গাটা খুব সাংঘাতিক না গেলে বুঝতাম না। তবে ভুত আছে কিনা জানিনা । ঘরে ঢুকে গা ছম ছম করছিল। আমি সহজে ভয় পাওয়ার লোক নই। কিন্তু সত্যি আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম একটা ছায়া র মতন কিছু দেখে  আসলে কি জানিস যার অস্তিত্ব নেই তাকে যদি কেউ প্রাধান্য দেয় সেটা মানুষের মস্তিষ্কে বাসা বেঁধে থাকে সে ভুত প্রেত যাই হোক না কেন। আসলে ওই ধারনা সকলের মনে বাসা বেঁধে আছে তাই ওর অস্তিত্ব না থেকেও মনে হয় আছে। দ্যাখ বামা খ্যাপা ওদের বস করে নিজের আয়ত্ত করেছিলেন । কবেকার কথা বল উনি ত আরও ভয়ংকর সব ভুত দেখেছেন । কিন্তু মনের জোর থাকলে ভুত প্রেত কেউ মানুষের সামনে আস্তে পারেনা। তবে আমি পারলামনা ।
হনুমান চালিশা পড়লে ওসবের ভয় থাকে না।
হয়ত তাই হবে।

Wednesday, November 21, 2018

 ‘দেশ ওয়েবসাইটের জন্য’ 
দেশ পত্রিকার সম্পাদক  উদ্দেশ্যে প্রেরিত।  

 মহাশয়/মহাশয়া  ,
                শুভ দ্বিপ্রহর । 
               দেশ পত্রিকাতে প্রকাশনের জন্য একটা নতুন গল্প "আমার হিয়ার মাঝে" লিখে পাঠালাম। 
আশাকরি গল্পটা আপনাদের সম্পাদক মণ্ডলী অনুমোদন করবেন প্রকাশনের জন্য । এর আগেও আমার লেখা 
আপনারা প্রকাশ করেছেন । সেই সুবাদে আবার আরেকটা গল্প পাঠালাম বেশ কিছু দিন পরে । এই গল্পটা 
একটি কন্যা সন্তান কে দত্তক নেওয়ার ব্যাপারে লেখা । লেখাটা পড়লে গল্পটার ক্লাইমেক্স আন্দাজ করবেন ।
শুভেচ্ছা নেবেন। 
                              ধন্যবাদ । ভালো থাকবেন। 
                                 ত্রিভুবন জিৎ  মুখার্জী                                            
আমার হিয়ার মাঝে 

ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী
  
কদিন ধরেই বেশ বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশে ঘন মেঘ। মাঝে মাঝেই বৃষ্টি ঝম ঝমিয়ে পড়ছে।  আজ ঈপ্সিতা কমলেশ এর এক বিশেষ দিন। আজ তাদের বিবাহ বার্ষিকী। কমলেশ অফিস থেকে ফেরার পথে একটা ফুলের তোড়া আর তার প্রাণের অধিক ঈপ্সিতার জন্য বিষ্ণুপুর সিল্কের শাড়ি নিয়ে কোনমতে নৈহাটি লোকালে উঠে পড়ে। বেলঘরিয়া ষ্টেশন আসতেই নেমে পড়ে। গাড়ি প্ল্যাটফর্মে নামতেই এক রাশ লোক ঝড়ের বেগে নেমে পড়ে।  
কমলেশ হাতের ব্যাগটা শক্ত হাতে চেপে ধরে কারন তাতে ঈপ্সিতার জন্য শাড়িটা যত্ন করে রাখা। ফুলের তোড়াটা কি করবে ভাবতে যাচ্ছিল হটাৎ পেছন থেকে কে ঠ্যালা দেয়। 
কমলেশ চিৎকার করে ওঠে। কি অসভ্য লোক রে বাবা। মানুষকে এরকম ভাবে কেউ ঠ্যালা দেয় !
- লোকাল ট্রেনে কি প্রথম উঠছেন দাদা? পেছন থেকে বিদ্রূপের কণ্ঠস্বর শুনে ওর মাথা গরম হয়ে যায়. 
- না আমি রোজকার যাত্রী। তবে এত বাজে অসভ্য লোক দেখতে অভ্যস্ত নই। 
- কাকে অসভ্য বলছেন ? ভিড় ঠেলে মানুষ কোন মতে এগুচ্ছে তার মধ্যে আপনি ফুলের তোড়া নিয়ে ঢুকে মানুষকে অসভ্য বলছেন ! আপনি নিজেকে কি ভাবেন বলুন ত ! অতো ফুলের সখ থাকলে ট্যাক্সিতে চড়ে ফুলের তোড়া নিয়ে আসলেই পারতেন । 
- আমি কিসে যাবো কিসে না যাবো সেটা কি আপনি ঠিক করবেন ? এই বলে কমলেশ নেমে পড়ে। না সে হাতিবাগান থেকে ফুলের তোড়াটা না কিনলেই পারত। বেলঘরিয়া স্টেশন এর কাছে কোন ফ্লোরিষ্টের দোকান থেকে  কিনে নিয়ে গেলে কি হত না ! ভুলটা  তার ই হয়েছে। কথাগুলো মনে মনে ভাবতে ভাবতে কখন বাড়ি এসে গিয়েছে খেয়াল করেনি।
ঘরে ঢুকেই ঈপ্সিতাকে জড়িয়ে ধরে বলে বিবাহ বার্ষিকীর অনেক অনেক ভালোবাসা।    আমি সত্যি তোমাকে পেয়ে ধন্য। 
তুমি ছাড়া আমার নেই কোন পণ্য ।
তুমি আমার অরণ্য । 
তুমি করেছ মোরে বণ্য ।  
- ঈপ্সিতা নিজেকে কমলেশের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে , কি আমি পণ্য ? মানে কমোডিটি !  তোমার এই  ঢং ন্যাকামি আমার আর ভালো লাগেনা। চল হাত মুখ ধুয়ে এক কাপ চা খাও। আমিও তোমার জন্য বসে আছি কখন আসবে বলে !   
- ট্রেনের ঘটনাটা বলল না কমলেশ। ফুল ঈপ্সিতা খুব ভালো বাসে তাই বাছাই করা কাট ফ্লাওয়ার এর তোড়াটা কিনেছিল। সেটা যে ট্রেনের যাত্রীদের পদপিষ্ট হয়ে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল সেটা বলা হয়নি। তাছাড়া সত্যি বলতে পকেটে আর টাকা ছিলনা নতুন ফুলের তোড়া কেনার। তাই শুধু বিষ্ণুপুর সিল্কের শাড়িটাই ঈপ্সিতাকে বিবাহ বার্ষিকীর উপহার হিসেবে প্রদান করে কিছুটা ধাতস্থ হল।  কেমন হয়েছে শাড়িটা পরে দেখত !
- এখন নয়। তুমি এত দাম দিয়ে শাড়ি কিনলে কেন গো?
 - আহা আমার সোহাগি ! কি করে না কিনি। বছরে এই দিনটার জন্য বসে থাকো। কি  উপহার আমি দিলাম তা নিয়ে একটু কটু মন্তব্য করবে । তবে এবারে তোমার জন্য ফুল আনা হলনা। মনটা খারাপ । 
- তাতে কি হয়েছে , এত দামি শাড়িত এনেছ। এই যথেষ্ট । 
- বলছ ! তবে আমার পাওনাটা দাও।
- যাহ ! 
এখানে বলে রাখি কমলেশ ঈপ্সিতার পাঁচ বছর বিয়ে হয়েছে কিন্তু ঈপ্সিতা সন্তান দিতে পারেনি কমলেশ কে । এই নিয়ে কমলেশের মনে কোন কষ্ট নেই কিন্তু  ঈপ্সিতার মনে কষ্ট আছে। সে নিজেকে অপরাধী মনে করে । অনেক ডাক্তার দেখান হয়েছে কারুর কোন দোষ ত্রুটি নেই বিভিন্ন টেস্ট এর ফলাফল যা বলছে। কমলেশ  এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না । এইতো বেশ আছি । কোন বন্ধন নেই। এই ভাবেই কেটে যাক না দিন গুলো।
ঈপ্সিতার মা মাসি নানা টোটকা করেন ফল কিছুই হয় না। ঈপ্সিতার একটি সন্তান থাকলে তার সময় কেটে যেত। সারাদিন টুক টাক কাজ নিয়ে থাকে।গান করে, ছবি আঁকে , সেলাই করে। ঘরের সমস্ত কাজ গুছিয়ে করে। সারা ঘর ঝক ঝক করে। রান্নাও ভালো করে। 
আজ কমলেশের জন্য ইলিশ পাতুরী, কসা মাংস, ফ্রাএড রাইস, পনির টিক্কা, চাটনি, পায়েস, সংগে কমলেশ কাল যে মিষ্টি এনে রেখেছিল ফ্রিজে । সব সুন্দর করে টেবিলে সাজিয়ে দেয়।  কমলেশ হাত মুখ ধুয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে। ট্রেনের কথা বলেনা। তবে ফুলের  তোড়াটা ট্রেনে পড়ে যাত্রীদের পদপিষ্টে নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে হাঁফ ছাড়ে।  
ঈপ্সিতা কথাটা শুনে বিব্রত হয়। 
- তোমার কিছু হয়নি ত ! 
- না আমার আবার কি হবে?
ঈপ্সিতা কমলেশকে খুব যত্ন করে খেতে দেয়।  কমলেশ পরিতৃপ্ত নয়নে ঈপ্সিতাকে দেখে ভাবে সত্যি তার বউ ভাগ্যটা ভালো। আসলে পুরুষ মানুষের মন জয় করতে হলে ভালো  রান্না র প্রয়োজন। ঈপ্সিতা সে বিষয় পটু।  
সারাদিনের খাটুনিতে কমলেশ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।  
ঈপ্সিতা তার মাথায় বিলি কেটে বলে এতই ঘুম!
- হ্যাঁ। খুব ঘুম পাচ্ছে।  
কিছুক্ষণের মধ্যেই নাসিকা গর্জন। 
বেল্কনিতে ঈপ্সিতা বসে একটা রবীন্দ্র সংগীত গাইল. 

আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাই নি।…….

হটাৎ ওর পিঠে কার হাতের স্পর্শ পেল। 
পেছন ফিরে তাকাতেই কমলেশ দেখে বলে.... ও তুমি!  
কমলেশ ঈপ্সিতার গানে মুগ্ধ। হাত তালি দিয়ে ইপ্সিতাকে সুন্দর গান পরিবেশনের জন্য ধন্যবাদ জানায় ।
-কোই আগে ত কখন আমার গানের সুখ্যাতি করনি ।
-আগে ত কখন লুকিয়ে লুকিয়ে তোমার গান শুনিনি।
-তাই বুঝি ! কপট রাগে ইপ্সিতাকে আরো সুন্দর দেখাচ্ছিল আজ।
কমলেশ দু চোখ ভরে তার প্রিয়া কে দেখছিল মুগ্ধ হয়ে । মেঘলা আকাশে চাঁদ স্পষ্ট ছিলনা তাও তার বারান্দার চাঁদ তার কাছে সবচেয়ে সুন্দর । কমলেশ একটা তৃপ্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে ।

                                       ------

কমলেশ ঈপ্সিতার দিনগুলো ভালোই কাটছিল । এরমধ্যে ঈপ্সিতার পীড়াপীড়িতে কমলেশ এক কন্যা সন্তানকে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় । ঘটনাটা এইরকম ঈপ্সিতার বাড়ির পরিচারিকার (লক্ষ্মীর) তৃতীয় কন্যা সন্তান হওয়াতে তার মাতাল স্বামী নাকি সেই শিশু কন্যা  সন্তানটিকে বাড়ির দোতালার ছাদ থেকে নিচে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার সময় লক্ষ্মী মাতাল স্বামীর হাত থেকে তার কন্যাটিকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঈপ্সিতার বাড়ি চলে আসে। ঈপ্সিতার পায়ে পড়ে সকল ঘটনার বৃত্তান্ত দেয়। ঈপ্সিতা শুনে তৎক্ষণাৎ থানাতে যাওয়ার হুমকি দেয় কিন্তু লক্ষ্মীর অনুরোধে ব্যাপারটা ধামা চাপা পড়ে যায়। সেইসময় ঈপ্সিতা লক্ষ্মীকে  দিয়ে সর্ত করিয়ে নেয় যেসে কন্যা সন্তানটিকে লালন পালন করবে কিন্তু লক্ষ্মী যেন তার এই মেয়েটিকে পরে দাবি না করে। আইনত দত্তক নিলে সেই ব্যবস্থাই থাকে যাতে পালিত পিতা মাতার কোন আইনগত সমস্যা পরে না হয়। যেমন বলা সেইরকম কাজ । লক্ষ্মীর স্বামী লক্ষ্মী এবং ঈপ্সিতা কমলেশ সকলে কোর্টে কন্যা সন্তানটিকে দত্তক নেয় । কোর্ট কমলেশ ঈপ্সিতার হাতে কন্যাটিকে প্রদান করে নানা আইনি কাগজ পত্র সই সবুদের পর । এখন আর কোন সমস্যা নেই । ঈপ্সিতা কন্যাটি পেয়ে খুব খুশি । তার মা হওয়ার সাধ লক্ষ্মীর মেয়ে পূর্ণ করে । সে এখন মা । 
লক্ষ্মী ওই বাড়িতেই সারা দিন কাজ করে। তার মেয়েটির মাতৃ স্নেহের অভাব হয়না ।  যেন দেবকী , যশোদা  দুই মাতার সান্নিধ্যে মেয়েটি ক্রমে বড় হতে লাগে। খুব আহ্লাদী তাই তার নাম আহ্লাদী দেয় ঈপ্সিতা। লক্ষ্মীও খুশি ওই নামে । আহ্লাদীর ছয় মাসে অন্নপ্রাশন হয় ঘটা করে। সত্য নারায়ণ পুজো হোম ইত্যাদি হয়। আত্মীয় স্বজন সকলেই আসে । কিন্তু ঈপ্সিতার মা এই পরের মেয়ের তাও পরিচারিকার মেয়ের ঘটা করে অন্নপ্রাশন একদম ই পছন্দ করেন না। ঈপ্সিতা ব্যাপারটা ঠাণ্ডা মাথায় সামাল দেয়। 
কমলেশ , ঈপ্সিতার খুশীতেই খুশী তাই সে এসব বিষয় মাথা ঘামায় না।  
আহ্লাদীর তিন বছর বয়েসে স্কুলে ভর্তি হয় । স্কুলের ড্রেসে তাকে বেশ ফুট ফুটে দেখায়। লক্ষ্মীর চক্ষে আনন্দাশ্রু । সে পরিতৃপ্ত নয়নে আহ্লাদীকে দেখে দুহাত ভরে আশীর্বাদ করে। আহ্লাদী, লক্ষ্মীর চেয়ে ঈপ্সিতাকে বেশি পছন্দ করে কিন্তু লক্মী যে মা, সে তার জননী তার  স্নেহ উপচে পড়ে আহ্লাদীর ওপর। স্কুলে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসা সব লক্ষ্মী করে। তার টিফিন বাক্স গোছান , জামা কাপড় কাচা , ইস্ত্রী করা ইত্যাদি সব কাজ । সে জানে এখানে তার কন্যাটি সযত্নে আছে এবং থাকবে ।  
আহ্লাদীর চার বছর পূর্ণ হয়ে গেল এর মধ্যে। পাঁচে পা দেওয়াতে তার ঘটা করে জন্মদিন পালন করা হল। লক্ষ্মী সব দেখে শান্তির নিঃশ্বাস নেয় । মনে মনে ভাবে সে নিশ্চিন্ত তার মেয়ের ব্যাপারে । ভালো ঘরে মেয়েটি মানুষ হচ্ছে পড়াশুনো করছে এর চেয়ে আর কি বেশি চায় । ভগবান ওকে সুস্থ সবল রাখুক সেটাই তার এক মাত্র ভগবানের কাছে প্রার্থনা ।এদিকে ইপ্সিতা আহ্লাদীকে এত বেশি ভালবেসে ফেলে যে আহ্লাদীর কাছে লক্ষ্মীর উপস্থিতি বেশি সহ্য করতে পারেনা। যতই হোক পালিতা মাতা আপন মাতা ত নয় !  লক্ষ্মী জেনেও না জানার ভান করে । ও ভালো করে জানে ওর সামান্য ভুলের জন্য হয়ত ভবিষ্যতে ওকেই তার মাশুল দিতে হবে। ও তাই সর্বদা সতর্ক থাকে ইপ্সিতা কে তোয়াজ করে ওর মন রেখে কথা বলে,ঘরের সমস্ত কাজ কর্ম করেআহ্লাদীর স্কুল ড্রেস ঝক ঝকে পরিষ্কার করে কাচে যদিও ওয়াশিং মেশিন আছে তবুও লক্ষ্মী নিজের হাতেই সমস্ত কাচে আয়রন করে আহ্লাদীকে স্কুলের বাস স্টপে নিয়ে যায় নিয়ে আসে।
রাস্তায় যেতে আস্তে লক্ষ্মীকে তার পাড়া পড়সির মহিলারা খুব টিটকিরি দেয় যেমন দুধের স্বাদ কি ঘোলে মেটে ওকে যত যত্ন করলেও ও কি তোমার হবে লক্ষ্মী মূর্খ নয় ও জানে এরা ওকে উত্তেজিত করে ফায়দা তুলবে । ও সব সহ্য করে মাথা নিচু করে যায় আর আসে । কাউকে কোন কথার জবাব দেয়না। আহ্লাদী এখন বড় হচ্ছে । কিছু কিছু আজব প্রশ্ন করে লক্ষ্মী কে। লক্ষ্মী বলে তুমি বড় হলে সব বুঝবে মা । এখন সুধু পড়াশুনো কর আর খেলু খেলু কর বলে আদর করে।
ইপ্সিতাই আহ্লাদীকে স্কুলের সমস্ত পড়া পড়ায় । কেমন সুন্দর টক টক করে রাইমস বলতে শিখেছে আহ্লাদী । স্কুলের পড়া খুব মনোযোগ দিয়ে করে আর ছবি আঁকে । আহ্লাদীর ছবি আঁকা তার মা ইপ্সিতা শিখিয়েছে । আহ্লাদী এখন ভালোই ছবি আঁকে । এইতো স্বাধীনতা দিবসে ছবি আঁকার প্রতিযোগিতায় আহ্লাদী প্রথম পুরষ্কার পায় জাতীয় পতাকা আঁকার জন্য। সকলে খুব প্রশংসা করে আহ্লাদীকে আর লক্ষ্মীর গর্বে আর আনন্দে দুচোখ থেকে আনন্দাশ্রু বয়ে যায়। সেই ত তার জন্মদাত্রী মা কিন্তু নেপথ্যে আছে তার মেয়ে কিছুই জানেনা জানার উপায় ও নেই । লক্ষ্মী তার মনের দুঃখ মনেই রাখে আবার এই বলে মনকে সান্ত্বনা দেয় , “কাঁদিস কেন আহ্লাদীকে   কে তুই এই ভাবে মানুষ করতে পারতিস পারতিস না ত তবে তোর দুঃখ কিসের কিন্তু মন মানতে চায়না । ” লক্ষ্মীর কিছু কিছু আচরণ ইপ্সিতার চোখে পড়ে । ও বোঝে লক্ষ্মী ক্রমশ তার মেয়ের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে । সে ভয় পায় যদি মেয়েটাকে চুরি করে নিয়ে পালায় হায়রে পোড়া কপাল এই দ্বন্দ্বে ছেড়ে-দিয়েছেন স্বয়ং ঈশ্বর তাদের দুই মাকে  আর মুখ টিপে হাসছেন । ইপ্সিতা নিজের সন্দেহে নিজেই লজ্জা পায়। ছিঃ একি ভাবছে সে সে না শিক্ষিতা । একজন অশিক্ষিতার মতন সন্দেহ করতে তার লজ্জা করেনা। 
এই টানা পড়া দুজনের মনেই চলতে থাকে।

                                         --৩—

  বেশ কিছুদিন এইভাবে চলতে থাকে । এরমধ্যে আহ্লাদী বড় হচ্ছে। ভালো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে কমলেশ ইপ্সিতা দুজনে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে এসেছে তাকে। এখন তার স্ট্যান্ডার্ড ওয়ান । স্কুলের বাস এসে নিয়ে যায় । লক্ষ্মী তুলে দিয়ে আসে । সারাদিন লক্ষ্মীর কেটে যায় মেয়ের কাজ করে এবং ইপ্সিতার ঘরের কাজ করে। লক্ষ্মী মনের আনন্দে সব কাজ করে। তার মেয়ে বড় ঘরে মানুষ হচ্ছে এটা তার কাছে এক স্বপ্ন। তাকে ত তার মা বাবা ঘাড় ধরে এক জল্লাদের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন । অবশ্য মা বাবার দোষ নেই সব তার অদৃষ্টের দোষ।
এরমধ্যে লক্ষ্মীর স্বামীর কিছু ধার দেনার জন্য টাকার প্রয়োজন হয় । বারে বারে লক্ষ্মীকে বলে ইপ্সিতার কাছ থেকে টাকাটা আনতে কিন্তু লক্ষ্মী কিছুতেই রাজি হয়না। বলে তোমার মেয়েকে ওরা ভালো ভাবে মানুষ করছে আবার তোমার মদ গাঁজা খাওয়ার টাকা দেবে কখনই নয়। কিসের জন্য  তোমার অত টাকার প্রয়োজন শুনি !

এ কথা শোনার পর মণ্টা (লক্ষ্মীর স্বামীতেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। বলে কি বললি আমার মুখের ওপর চোপা । লক্ষ্মীকে মার ধর করে । বলে টাকা না আনলে আমার ঘরে ঢ়ুকবিনা । ওখানেই থাক।

-      লক্ষ্মী বলে তবে তাই হবে কে তোমাকে গায়ে গতরে খেটে পুষবে সারা জীবন শুষে খেয়েছ।
আমার কথা কোনোদিন ভেবে দেখেছ আমি কি খাই কেমন ভাবে তোমার সংসার   চালাই?

।      পরে নানান ধমক চমকে লক্ষ্মী ভয় পায় এবং ইপ্সিতাকে ১০,০০০ টাকা চেয়ে বসে ।
ইপ্সিতা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে এত টাকা তার কিসের জন্য প্রয়োজন ।
লক্ষ্মী বলে তার বর ধার করেছে কোথায় কি ব্যবসার জন্য তাই জন্য চাইছে ।

-      কিসের ব্যবসা ?

-      জানিনা-গো দিদি আমি মুখু সুক্ষু মানুষ ওই ব্যবসার কথা কি করে জানবো বল তা ছাড়া আমি ত তোমার কাছেই সারা দিন থাকি না কি বল । থাকি ত !

-      তা ঠিক তবুও তোর জানা উচিৎ । এতোগুলো টাকা নিয়ে ও হয় মদ গিলবে নয় বাজে যায়গায়   যাবে 

-      লক্ষ্মী বরের গুণকির্তন কথা আর কি বলবে বলে ঠিক আছে  আমি বলে দেব ওকে অন্য জায়গায় চাইবে।

-      না না তা নয় তবে একটা সন্দেহ ত হয় বল।

-      কি করি বল দিদি সব ই আমার অদৃষ্ট । তোমরা আমার মেয়েকে দত্তক নিয়ে ভালো ভাবে মানুষ করছ তা কি ওই জল্লাদ টা জানে সে তার নিজের সুখ আর ফুর্তি তে ব্যস্ত । আমি গতর খাটিয়ে নিজে খাবো আবার ওকে খাওয়াবো । একটা যায়গায় কি কাজ করত সেখানেও কি গণ্ডগোল করেছে। ইউনিয়নের লিডার হয়েছে । ব্যাস কাজটা গেল চলে। এখন বলে ব্যবসা করবো । আমি কি করি বলতে পারো দিদি বলে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। না দিদি তুমি টাকা দিও না। একবার দিলে ও পেয়ে বসবে । এমনিতেই ত আমাকে জ্বালাচ্ছে। আমার মেয়েটা এখানে ভালো ভাবে মানুষ হচ্ছে ওর কু নজর লেগেছে এবার আমার মেয়েটার ওপর ।

-      ঠিক আছে ঠিক আছে তুই যা আহ্লাদীর স্কুল থেকে আসার সময় হয়ে গেল যা গিয়ে নিয়ে আয়।

-      যাই গো দিদি  বলে চোখ পুঁছতে পুঁছতে লক্ষ্মী চলে যায়।




                                   --- ৪ ---

মণ্টা তার বন্ধুদের সাথে সুরা পানে মসগুল। বন্ধুদের বলে বুঝলি , বৌটা আমার এ.টি.এম  মেশিন। পড়াশুনো করেনি কিন্তু বেশ রোজগার করছে। আমার ছোট মেয়েটাকে বড়লোকের ঘরে মানুষ করাচ্ছে। সে এখন ইংরেজি শিখেছে। টক টক করে অনেক ইংরেজিতে কবিতা আওড়াচ্ছে । আমার বৌ ত ওর আয়া রে। মেয়ের আয়া মা’ । শুনেছিস কোনদিন নিজের মেয়ের আয়া হয় কোন মা। বলে হেঁসে কুটিপাটি খায়। বৌকে বলেছি ১০,০০০ টাকা আনতে নাহলে ঘর থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব।

পিন্টু মণ্টা র সাকরেদ বলে সেকিরে বৌদি চলেগেলে খাবি কিতোর ত রোজগার পাতি কিছু নেই । 

-      সেই জন্যই ত বলেছি টাকা আন তবেই ঘরে থাকবি ।

-      কিন্তু বৌদি যদি সত্যি চলে গিয়ে ওদের বাড়িতে থাকে তখন তুই কি করবি ?

-      দূর আমার আরও দুটো মেয়ে আছে না । তারা ত স্কুলে পড়ে । তাদের ছেড়ে ও যাবে না । আমি জানি । ও ঠিক টাকা আনবে । দেখিস এই বলে গ্লাসের বাকিটুকু গলাধঃকরণ করে। 

-      বলছিস গুরু। একটু চরণামৃত দে মাইরি । গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। বৌদি তাহলে  বড়ই ফাঁদে পড়েছে বল।

-      হ্যাঁ । আমার বুদ্ধির কাছে ও পাত্তা পাবে কিসসু করতে পারবেনা দেখে নিস।  আনবে না ওর ঘাড় আনবে। আজ বাড়িতে আশুগ দাঁড়া । ওর এক দিন কি আমার এক দিন।
-      চল গুরু রাত অনেক হল চল যাই।
-      দূর মোটে সোয়া আটটা বাজে। তুই দেখছি এই টুকুতেই চোখে সর্ষে ফুল দেখছিস। তবে হ্যাঁ ওর আসার সময় হয়ে গেল।
   

স্কুল থেকে আসার পর আহ্লাদী ইপ্সিতার কাছেই থাকে। ঘরেই ওর বেশি সময় কাটে। বাইরে বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে ছাড়ে না ইপ্সিতা । সকলের নানা প্রশ্নে মেয়েটার মনে যদি কিছু তার কু প্রভাব পড়ে তাই ইপ্সিতা ওকে বাড়িতে ডল হাউস বার্বি ডল ইত্যাদি কিনে দিয়েছে যাতে ও বাড়িতে থাকতে চায়।
লক্ষ্মীবাড়ির সমস্ত রান্না বানা সেরে আহ্লাদীকে নিয়ে ঘরে এনে ওকে খাইয়ে দাইয়ে ইপ্সিতার  ঘরে ছেড়ে আসে।  ইপ্সিতা দিদি কিছু খাবার দিয়ে ছিল লক্ষ্মীর দুই মেয়ের জন্য। সবসময় ইপ্সিতা বলে ওই মেয়ে দুটোর কি হবে কে জানে ?

-      লক্ষ্মী বলে যা অদৃষ্টে আছে তাই হবে দিদি। আমি যথা সাধ্য চেষ্টা করছি যাতে ওরা মানুষ হয়। ওরা যতদূর পড়ছে পড়ুক । তুমি ত আছো দিদি। আমাকে একটু সাহায্য করবেনা ওদের পড়া শুনোর জন্য । কি গো করবে ত ! বলে ইপ্সিতার মুখের দিকে তাকায় ।  

-      নিশ্চয়ই করব । কেন করবোনা। আমি চাই ওরা পড়ে মানুষ হোক । দিদি নাম্বার ওয়ানে  দেখছিসনা কত তোদের মতন মেয়ে স্বরোজগারক্ষম হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সংসার চালাচ্ছে আবার রোজগার ও করছে। সরকার তোদের জন্য রোজগারের পথ অনেক খুলে রেখেছেন। তুই এক কাজ করবি তোর দুই মেয়েকে কিছু হাতের কাজ শেখা। দাঁড়া আমাদের ওয়ার্ডের কর্পোরেটারের সঙ্গে কথা বলে দেখব আমি।   

-      কোথা থেকে টাকা পাবো দিদি ওরা সকলে টাকা নাহলে কিছু করেনা গো দিদি । গরিবের দুঃখ কেউ শোনেনা।  

-      কে বলল কেউ শোনেনা। তুই গিয়েছিস ওদের কাছে?

-      তবে আমার একটা কিছু বেশি রোজগারের ব্যবস্থা করনা গো দিদি । আমি রাত জেগে কাজ করতে রাজি । তোমার সব কাজ সেরে আমি যাবো । আমার মেয়ে দুটোকে মানুষ করতে হবে গো দিদি। ওরা বড় দুঃখী । এরকম বাপের মেয়ে হওয়া পূর্ব জন্মের পাপ ।

-       যত বাজে কথা বলিস । পূর্ব জন্ম কি রে তুই দেখেছিস পূর্ব জন্ম ও সব বাজে কথা । দাঁড়া ভগবান সহায় হলে সব ঠিক ঠাক হয়ে যাবে। ভালোকথা তুই সেলাই জানিস ?

-      না তবে শিখে নেব । তুমি দেখ আমার জন্য কোন শিক্ষানুষ্ঠান আমি ঠিক সেখানে গিয়ে শিখে নেব। 

-      ঠিক আছে আমি কথা বলে দেখব ।

ইপ্সিতার সঙ্গে ওদের কাউন্সিলার আর কর্পোরেটের ভালোই চেনা শোনা আছে । ওনারা এই বিষয় কিছু সুরাহা করতে পারবেন বলে মনে হয়। কর্পোরেটারের কাছথেকে কণ্যাশ্রী ’   যোজনায়  সম্পৃক্ত  অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে লক্ষ্মীর দুই মেয়ের পড়ার জন্য কিছু আর্থিক সুরাহা করতে পারলে ওর অনেকটা উপকার হয় । কর্পোরেটারের অনুমোদনে ওরা  দুজনেই কন্যা-শ্রীর সরকারী সাহায্য আবেদন করে । রাজ্যে গরিব জনসাধারণের জন্য সরকার অনেক যোজনা করছেন । তার মধ্যে কণ্যাশ্রী  একটা।  
এমনিতেই লক্ষ্মীর মেয়ে দুটোই ভালো পড়াশুনো করে। আসলে গরীবের ঘরের মেয়েরা আজকাল ভালো পড়ে কারণ ওরা ছোট বেলা থেকেই আর্থিক অনাটনে ভোগে দুবেলা দুমুঠো খাবার পায়না সেটাই ওদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে।
লক্ষ্মী ঘরে ফেরার পর তুমুল কাণ্ড বাঁধে । মণ্টা  বারে বারে এক কথা জিজ্ঞাসা করে লক্ষ্মী টাকা চাইলো না চাইলো না। লক্ষ্মী কোন কথার জবাব না দিয়ে রান্নাঘরে ঢোকে । ও জানে মন্টা এই সময় নেশা করে এসেছে কিছু বললে তুমুল কান্ড লাগাবে।
এইসময় মণটা ক্ষুব্ধ হোয়ে বলে টাকা না আনলে ঘর-থেকে বেরিয়ে যা । লক্ষ্মী মেয়ে দুটোর হাত ধরে বেরুতে যাচ্ছিল মণ্টা বাধা দিয়ে বলে তুই একা যা ওদের কেন নিচ্ছিস?
কিন্তু মেয়ে দুটো মায়ের সংগে যেতে চাইলো । তারা সাফ তাদের বাবাকে জানিয়ে দেয় তাদের মা যেখানে যাবে তারা তার সংগে সেখানেই থাকবে।   লক্মী  জানে ওর সঙ্গে বচসা করে লাভনেই । তারচেয়ে আজকের দিনটা দিদির কাছে থেকে ওর মায়ের কাছে চলে-যাবে। চৌকাঠ পেরুনোর সময় লক্ষ্মীকে মণ্টা জোরে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। টাল সামলাতে না পেরে লক্ষ্মী উঠনে পড়ে যায় এবং কপাল ফেটে রক্ত ঝরে। লক্ষ্মী জোরে চিৎকার করে বলে মেরে ফেলল  তোমরা কেউ বাঁচাও এই জল্লাদের হাত থেকে আমাকে।
এরমধ্যে  পাড়ার লোকজন এসে পৌঁছোয় । মণ্টাকে সকলে গালি গালাজ করে। মণ্টা চুপসে যাওয়ার বস্তু নয় । সে ফুঁসে ওঠে আমার বাড়িতে তোরা কে রে ?
মেয়েগুলো তার স্বরে চিৎকার করে এর প্রতিবাদ করে । তারা যথেষ্ট নির্যাতন চোখের সামনে দেখছে । পাড়ার ছেলেদের বলে বাবা প্রায় ই মাকে মারধোর করে ঘরে অশান্তি করে । আমরা আর এখানে থাকব না। মামার বাড়ি চলে যাব।
মণ্টা চেঁচিয়ে উঠে বলে কি বললি কি বললি মামার বাড়ি হা হা হা ওরে তোদের মামার বাড়ি থাকলে ত যাবি । 
তাহলে অন্য কোথাও চলে যাবো কিন্তু তোমার মতন বাবার কাছে থাকবনা । আমরা জ্ঞান হওয়া থেকে দেখছি তুমি মাকে অকারণে মার। মা মুখ বুঝে সহ্য করে আমাদের মুখ দেখে।
ওরে তোদের ত খুব মুখের চোপা হয়েছে দেখছি। দাঁড়া .....
না না মেয়েদের গায়ে হাত দেবে না মণ্টা দা । ভালো হবেনা। পাড়ার ছেলেরা এক সংগে চিৎকার করে ওঠে।
কি করবি তোরা ?
দেখতে চাও কি করব । 
পেছনে এক কনস্টেবল সাদা পোশাকে ছিল । সে বলে চলুন আপনি থানায় । ওখানেই এর সমাধান হবে।
থানায়.. থানায় কেন যাবো আমি কি চোর না ডাকাত ?
তারচেয়ে বেশি সাংঘাতিক আপনি । চলুন।
কিন্তু আপনি কে?
আমি কে সেটা থানায় গেলেই জানতে পারবেন । বাড়ির স্ত্রী কে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন  সেটাই কি যথেষ্ট নয় আপনাকে থানায় নেওয়ার জন্য। আবার মুখে মুখে তর্ক কঅরছেন  !
ওরে সব্বাই মিলে ধরত । পালায় না যেন । কনস্টেবল চেঁচিয়ে ওঠে।
লক্ষ্মী সঙ্গে সঙ্গে চলে এসে বাধা দেয় । দারোগা বাবু এবারের মতন মাফ করুন ওকে। ও রাগের চোটে এমনটি করে ফেলেছে। আর করবেনা ভবিষ্যতে ।
আপনি কি করে বলছেন ও আর করবেনা বলে যে বাবা নিজের পরিবারকে হেনস্তা করে তাদের ভরণ পোষণ এর দায়িত্ব না নিয়ে স্ত্রীকে টাকা আনতে বলে তার মনিবের কাছ থেকে এবং না আনতে পারলে মার ধর করে সে যে ভবিষ্যতে এমনটি করবে না সেটা হলফ করে কি করে বলতে পারছেন। না ওনাকে থানায় যেতেই হবে। এই বলে মণ্টা কে কনস্টেবল ধরে নিয়ে জান।  
লক্ষ্মী মহা ফ্যাসাদে পড়লো । স্বামীকে কি করে বাঁচাবে কিছু কূল কিনারা পেলনা। 
মন্টাকে পুলিস নিয়ে গেল থানায়।
থানায় ওসি মন্টাকে জিজ্ঞাসা বাদের পর চার্জ শিট তৈরি করার বাহানা করেন। বলেন তুই তোর বৌকে প্রায়  মারধোর করিস। আইনত ওটা জামিন অযোগ্য ধারা ৪৯৮-এ  এ কোর্ট চালান করলে কি হবে জানিস? শ্রী ঘরে কমসে কম ৫-৬ বছর কাটাতে হবে।
এরমধ্যে লক্ষ্মী ইপ্সিতার বাড়ি গিয়ে সমস্ত বিষয় বলে।
ইপ্সিতা বিরক্তির স্বরে বলে আমি কি করব ? ওই পুলিশের কাছে আমি যেতে পারবোনা।
লক্ষ্মী পাড়ার ছেলেদের বলেছে ওকে দিয়ে থানায় লিখিয়ে নিয়ে ছেড়ে দিতে বলতে। পাড়ার ছেলেরা তাই করল । থানার ওসি কে বলল সার ওকে এইবারের মতন ছেড়ে দেন । ও আর করবেনা ।
-      ওটা তোরা বলছিস। ও কি বলেছে? না না ওকে শ্রী ঘরেই পাঠাব।
মন্টা সটান ওসির পায়ের তলায় পড়ে বলেন চাকরি যাওয়াতে মণটা ভালো নেই দারোগা বাবু । কাঁহাতক বৌয়ের গজ গজানি শুনবো । মনমেজাজ ভালো ছিলনা। ভুল করে ফেলেছি আর হবেনা।
-      না না তোদের মতন ষাঁড় দের আমি চিনিরে । বয়েস ত কম হলনা । তোদের পেটে একটু পড়লেই স্বর্গ দেখিস নিজেকে ইন্দ্র ভাবিস। তোর বৌ না লিখলে হবেনা।
লক্ষ্মী এরমধ্যে এসে পড়ে । বলে বাবু ওকে ছেড়ে দিন। ভুল করে ফেলেছে।
-      তবে তোরা দুজনে কাগজে সই করে দে। পাড়ার একটা মাতব্বর ছেলে ওসির কানে কানে কি বলে।
      ওসি মাথা নাড়িয় বলেন না না।   
    -  তাহলে ঠিক আছে স্যার । (ছেলেটি বোঝে ও সব ভয় দেখানোর জন্য ওসি বলছেন)
মন্টা সই করার সময় বলে স্যার সাদা কাগজে ..... !
-      চুপ যা বলছি তাই কর । বেশি কথা বললে .....!
-      হ্যাঁ সার করছি এই বলে লক্ষ্মী আর মন্টা দুজনেই কাগজে টিপ সই করে দেয়   
দুজনে ফিরে আসে ঘরে।
মন্টা খুব ভয় পেয়ে গিয়েছে মুখ দেখেই লক্ষ্মী টের পেয়েছে। মনে মনে ভাবে ঠিক হয়েছে। এইরকম ওসুধের প্রয়োজন ছিল। তারপর ভাবে আহারে আমার জন্য লোক্টার এত অসম্মান হল।

                             -----৫------

পরেরদিন লক্ষ্মী ইপ্সিতার কাছে বলে দিদি আমার স্বামী কিছু সরকারি সাহায্য পেতে পারে ও একটা মটর সাইকেল সারানোর গ্যারেজ করতে চায়।
-      জানিনা । আমাকে ওর বিষয় কিছু বলিস না । তুই যা এখন এখান থেকে।
লক্ষ্মী আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায় নিজের কাজে। ১০,০০০ টাকা তে ত গ্যারেজ হবে না। আরও  টাকা লাগবে। তবে ওর কানের দুটো সোনার দুল কি বিক্রি করে দেবে !
পরর দিন লক্ষ্মীকে ওর কানের দুল না থাকা অবস্থায় দেখে  ইপ্সিতা চমকে ওঠে ।
-      কিরে  তোর কানের দুল দুটো কোথায় গেল?
-      ও কিছুনা ঘরে রেখে এসেছি।
-      ঘরে রেখে এসেছিস মানে ! তোর বর ত ওগুলো বেচে দেবে ।
-      না দিদি কালকের পর থেকে ওর মনে ভয় ঢুকে গিয়েছে। আমায় বারে বারে বলছে আমায় মাফ কর লক্ষ্মী আমি তোর ওপর খুব অনাচার অত্যাচার করেছি।
-      ওরে ওরা কুমীরের জাত বুঝলি । মটকা মেরে পড়ে থাকবে সময় বুঝে ঠ্যাং ধরে জলে নামিয়ে গিলে খাবে। ওদের বিশ্বাস করিস না । আর তুই ই বা কি করবি তোদের মতন হাজার হাজার মহিলা এই দেশে এই রকম অত্যাচারিতা হয়ে ঘরের এক কোনে পড়ে থাকে । গায়ে গতরে খেটে ঘরের সমস্ত দায়িত্ব নিয়েও তাদের নিস্তার নেই । ভারতবর্ষে হিন্দু নারীদের এটাই মহা-নতা । কিন্তু একে আমি প্রশ্রয় ছাড়া কি বলব বল।
-      না দিদি এখন আর ওরকম করবেনা । পুলিশের ভয় ধরে গিয়েছে। তা ছাড়া ওই কাগজে সই করিয়ে রেখেছেন না দারোগা বাবু।
-      বলিস কিরে কি লেখা শুনি।
-      আমি কি করে বলব বল আমি কি লেখা পড়া জানি।
-      তা বটে । তবে চিন্তার বিষয়।
-      দিদি ওকে একটা কাজে লাগিয়ে দাওনা । ও গাড়ি চালাতেও পারে ওর লাইসেন্স ও আছে । 
-      দাঁড়া কমলেশ আসুক ওকে বলে দেখি কি করা যেতে পারে।
-      দেখনা দিদি তোমার উপকারে ও যদি কিছু কাজ পায় ।
-      আমি কিছু নির্ভর প্রতিশ্রুতি দিতে পারছিনা।    

রাতে কমলেশকে গত কালের সমস্ত ঘটনার বিস্তারিত বিবরণী দিয়ে ইপ্সিতা বলে ওই লক্ষ্মীর স্বামী মন্টার কিছু কাজের সুবিধে হতে পারে কিনা । ও নাকি ড্রাইভিং জানে। লাইসেন্স ও  আছে।
-      আগে বলনিত। দেখি আমাদের অফিসের গাড়ির ড্রাইভারের প্রয়োজন। আমি ত ড্রাইভার নেই বলে ট্র্যাভেলস থেকে গাড়ি নিয়ে টুরে যাই। অনেক সময় ডিউটির অসুবিধে হয়।  তবে হেড অফিস থেকে পারমিশন না পেলে হবে না।  ওই টেম্পোরারি ড্রাইভার । সরকারি অফিস বলে আহামরি মাইনে দেবেনা।  দিন মজুরদের মতন টাকা পাবে।  আজকাল কোন ড্রাইভারকে সরকার থেকে নিযুক্তি দেওয়া হচ্ছেনা। সব টেম্পোরারি ড্রাইভার।  
-      তাই দাওনা । কিছু সুরহা হবে।
-      হ্যাঁ তা হবে । তবে ওই ইউনিয়ন বাজি করলে দূর করে দেব। ওকে একটু বাজিয়ে দেখতে হবে। ওর ড্রাইভিং এর হাত কেমন কে জানে। মদ খেয়ে চালালে বিপদ। ওই সব চলবে না।
-      নিশ্চয় । মদ খেয়ে চালাবে রক্ষ্যে কর !  দরকার নেই বাবা। শেষে জীবন নিয়ে টানা টানি ।
-      না না তা কেন। কাল ওকে ডেকে পাঠাও । সকাল বেলায় আসে যেন। আমি বেরুবার  আগে ওর সঙ্গে কথা বলতে চাই।
-      ঠিক আছে লক্ষ্মী আসুক ওই নিয়ে আসবে। কিছু যদি কাজের সুরাহা হয় ও আর লক্ষ্মীকে হয়রান করবেনা। তবে ড্রাইভিং জেনে বসে ছিল কেন বলতকিছুই বুঝতে পারছিনা বাবা।
-     ও ওরকম হয়। ওই শ্রেণীর লোকেরা কাজ যেনেও কিছু না করে পায়ের ওপর পা দিয়ে বৌ কে খাটিয়ে খেতে ভালোবাসে। যখন বিপাকে পড়ে তখন বাবাজীবন রা কাজে মন দেয়। এদের মানসিকতা বড় বিচিত্র বুঝলে ইপ্সিতা ।
-    তা হবে আমার ওই বিষয় জ্ঞান কম।
-
সকালে লক্ষ্মী এলে ইপ্সিতা বলে ওর স্বামী মন্টাকে ডেকে আনতে । লক্ষ্মী বলে ও সকাল সকাল কোথায় কাজের সন্ধান পেয়ে চলে গিয়েছে। জানিনা কখন আসবে।
-    শোন কথা এই বললি ওর কাজের প্রয়োজন বলে।
-    আমি কি করে জানব বল ?
-    হুম ম । কমলেশ চলে যায় টিফিন নিয়ে ।
লক্ষ্মী বিকেলে ইপ্সিতাকে খবর দেয় মন্টা এক মালিকের  ট্যাক্সি চালাচ্ছে গতিধারা’ না কি নাম বলল ?
-      বাঃ সেত ভালো হল রে । কোলকাতাতে গতিধারা ট্যাক্সি অনেক চলে। তবে ত ঠিক  আছে। তুই চিন্তা করছিস কেন?
-      আমি কি ওসবের কিছু বুঝি দিদি।
-      হ্যাঁ তা যা বলেছিস। এবার বোধ হয় তোর সুদিন এলো লক্ষ্মী ।
-      তাই যেন হয় গো।

ইপ্সিতা নিজের ঘরে চলে গিয়ে আহ্লাদীর পড়াশুনো দেখতে যায়। আহ্লাদী মায়ের কাছে তার স্কুলের সমস্ত পড়াশুনো হোম ওয়ার্ক করে খেলতে বসে।
লক্ষ্মী যথাযথ ঘরের সমস্ত কাজ কর্ম করে। রাতের রান্না সেরে ঘরে যায় । যাওয়ার আগে আহ্লাদীকে একটু আদর করে যায় । ওকে দেখে চোখ ভরে যায় জলে। দুহাত ভরে আশীর্বাদ করে চোখ পুঁছে ।
-      আহ্লাদী লক্ষ্মীর হাবভাব দেখে আশ্চর্য হয় । ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে তুমি আমায় দেখে ওরকম কাঁদো কেন গো লক্ষ্মী পিসী ।
-      না না ওই রান্না করতে গিয়ে একটু লংকা লেগেছিল ওই হাত চোখে দিয়েছি ব্যাস চোখ জ্বালা করছে আর জল বেরুচ্ছে।
-      ও তাই বল। আমি ভাবলাম আবার বুঝি কিছু হল ?
-      ইপ্সিতা আহ্লাদীকে নিজের কাছে ডাকে।
-      যাচ্ছি গো যাচ্ছি লক্ষ্মী পিসীর সংগে একটু কথা বলছি । বাবা আমাকে না দেখলে মায়ের এক দণ্ড চলেনা । বুঝেছ লক্ষ্মী পিসী বলে চোখ বড় বড় করে তাকায়।
-      লক্ষ্মী  আর ইপ্সিতা দুজনেই ওর পাকা পাকা কথা শুনে হেঁসে কুটিপাটি খায়।
-      যাইগো দিদি অনেক বেলা হল ।



                         ------ ৬ -----


ঘরে পৌঁছে শান্তির নিঃশ্বাস নেয়। আহ্লাদীর কথা মনেকরে হেঁসেই চলে লক্ষ্মী  । আজ অনেক দিন পর লক্ষ্মী প্রাণ খুলে হাঁসে ।  তার ঘরে ছোট্ট টি-ভীতে  গান শোনে ঃ
তোমার হৃদ মাঝারে রাখিব ছেড়ে দেবনা ......। জী সারে গা মা পা তে ওই প্রোগ্রাম  হচ্ছিল । এর মধ্যে মন্টা এসে পৌঁছয় গাড়ি নিয়ে । বলে চল সবাই মিলে ঘুরে আসি । 
লক্ষ্মী অনেকদিন কলকাতা যায়নি । নিজের কাজ নিয়ে এতই ব্যস্ত ঘোরার সময় হয়না। মনটার পরিবর্তন দেখে আশ্চর্য হয়। বলে সত্যি বেড়াতে নিয়ে যাবে। এই রাতে কোথায় যাবে ?
-      না যাওয়ার কি আছে চল যাই । লক্ষ্মীকে জড়িয়ে ধরে বলে আজ ওই বিয়ের শাড়িটা বার কর দেখি । ওটা পরলে কেমন লাগে তোমাকে।
-      বাবা । কোথায় যাবো আমি আদিখ্যেতা দেখে হাঁসি পায় আমার । কি হয়েছে বলত ?
-      বেশ কিছু টাকা রোজগার হয়েছে আজ। তোমাকে নিয়ে তাই ফুর্তি করতে যাবো   চল। মেয়েদের ঘুম পাড়িয়ে দাও।
-      না মেয়েদের না নিয়ে যাবো না। ও বেচারার কোথাও যায়না। ওদের ও ত ইচ্ছে হয়।
-      আজ আমার আর তোমার ইচ্ছেই সব । জানোনা   আজ কি ?
       আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী ।
-      ও মা তাই । দেখ আমি ভুলেই গিয়েছি । তুমি মনে রেখেছ। আজ সূর্য কোন দিকে উঠেছে ?
-      মনটা লক্ষ্মীকে আজ নতুন ভাবে পেতে চায় । যাতে কোন খাদ থাকবেন তাদের ভালোবাসার । দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে যেন কত দিন তারা বিরহের দিন কাটিয়েছে ।
 অভাবের সংসারে একটার  পর একটা মেয়ে জন্ম তার মনকে বিষিয়ে তুলেছিল কিন্তু সে ত জানেনা মেয়ে জন্মর জন্য নারীর কোন ভূমিকা নেই। মেয়ে জন্মর জন্য পুরুষ ই দায়ী । এটা খুব ই সহজ কথা কিন্তু অধিকাংশ পুরুষ এই সামান্য কথাটা জানেনে বলে অনেক সংসারে অশান্তির ঝড় বয়ে যায়।
লক্ষ্মী  মনটাকে বলে ও ঘরে মেয়েরা আছে ছাড় আমাকে। ওরা বড় হচ্ছে কি শিখবে আমাদের কাছথেকে ?
লক্ষ্মী  পরিতৃপ্ত নয়নে তার স্বামীকে নতুন ভাবে পেয়ে ভগবানকে জোড় হস্তে প্রণাম করে বলে হে ঠাকুর আমার সংসারে এই রকম শান্তি বজায় রাখ ঠাকুর। আমি এবার খুব খুশি ঠাকুর ।
মনটা  লক্ষ্মীকে নিয়ে গাড়ির দিকে এগোয় । পেছনে তার দুই মেয়ে । বাবার পরিবর্তনে তারাও খুশি। ইপ্সিতা মাসি শুনলে নিশ্চয় খুশী হবে।

৪৪৯৫ শব্দ )        

Name: TRIBHUBANJIT MUKHERJEE 

Address Tribhubanjit Mukherjee
              
       C/o Sri Bivash Chakraborty 
             77, Ramkanto Bose Street 
              At/P.O BAGBAZAR 
              KOLKATA 700 003 
Mob. No. 9437627903  /  9337544971