Monday, July 20, 2015

পথে প্রান্তরেঃ ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী অর্ক খেত্র কোণার্ক ।


 

পথে প্রান্তরেঃ ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী

Posted in 


















পথে প্রান্তরে  


অর্ক ক্ষেত্র কোণার্ক 
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী 



কোণার্ক সূর্য মন্দির এর অস্তিত্ব সম্পূর্ণ থাকলে সেটি সেভেন ওয়ান্ডার্স (সপ্ত আশ্চর্য) এর মধ্যে একটি হতো, বা তালিকাটি পরিবর্ধিত হয়ে এইট ওয়ান্ডার্স বলা হত এতে সন্দেহ নেই। সংস্কৃততে কোণ+অর্ক=কোণার্ক। কোণ অর্থাৎ কোণা বা সূর্যের বিভিন্ন কোণের অবস্থান, অর্ক অর্থাৎ সূর্য। এই মন্দিরটি সূর্যের বিভিন্ন অবস্থানে গুরুত্বপূর্ণ অর্থ বহন করে। এটি সূর্যের মন্দির ছিল। এখনও এর ভগ্নাবশেষ যা আছে, তা সমস্ত পর্যটক দের আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু। পৃথিবীর সমস্ত প্রান্ত থেকে সারা বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক কোণার্ক সূর্য মন্দির দেখতে আসেন এর ভাস্কর্য ও কলা কীর্তি দেখার জন্য। 

কোণার্কের সূর্য মন্দিরের ইতিহাসঃ- 

এই মন্দিরের টানে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এখানে আসেন অপূর্ব ভাস্কর্য, প্রস্তরের উপর কারুকার্য এবং নৃত্যাঙ্গনাদের অপূর্ব শৈলীতে নৃত্যের প্রস্তর মূর্তি দেখতে। খজুরাহ এবং কোণার্ক দুটোই ভারতবর্ষের অপূর্ব সৃষ্টি। তবে কোণার্কের বৈচিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। ১৩শ শতাব্দীর এই অদ্ভুত কীর্তিকে ইংরাজিতে Black Pagoda বলা হয়। ১২৫০ শতাব্দীতে পূর্ব গঙ্গ বংশের রাজা লাঙ্গুড়া নৃসিংহদেব এই মন্দির নির্মাণ করান। প্রবাদ আছে, ১২০০ প্রস্তর শিল্পী ওই সূর্য মন্দির নির্মানে নিযুক্ত হন রাজার দ্বারা। প্রধান মন্দিরটিতে ৭ টি ঘোড়ার উপর সূর্য মূর্তি নির্মিত হয়েছিল। এই সাতটি ঘোড়া সপ্তাহের সাতটি দিনের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত। মন্দির গর্ভগৃহে রাখা সূর্য দেবতার মুখে এসে পড়ত সূর্যর প্রথম কিরণ। বারো জোড়া ঘোড়ার উপর ওই মন্দির নির্মান হয়। প্রত্যেক চাকা এক একটি সূর্য ঘড়ি। অপূর্ব কলা কৌশলে তৈরি।

কোণার্ক মন্দির তৈরির ইতিহাস যেমন নিপুণ ভাস্কর্যের উদাহরণ, ঠিক তেমনি নৃশংস এক বলিদানের সাক্ষী। ১২০০ শিল্পীকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানর জন্য বলি দেওয়া হয় নাবালক প্রস্তর শিল্পী ধর্মপদকে। ১২ বছর বয়েসের ধর্মপদ ছিল অন্যতম প্রধান স্থপতি বিশু মহারাণার পুত্র। বারো বছর ধরে যে ১২০০ প্রস্তর শিল্পীকে বিশু মহারাণা নিয়োগ করেন কোণার্কের মন্দির নির্মাণের জন্য, তারা মন্দির নির্মাণের পর সূর্য মূর্তির চূড়ায় মুকুট স্থাপনে অসমর্থ হয়। রাজা নৃসিংহ দেব বিশু মহারাণাকে একদিনের সময় দেন ওই মুকুট স্থাপনের জন্য। কিন্তু মহারাণারা সকলে অকৃতকার্য হন। ধর্মপদ বাবার কাজ দেখতে আসে এবং অন্য সকল মহারাণাদের কাছে শোনে যে রাত পোহালে তাদের সকলের শিরশ্ছেদন সুনিশ্চিত। ধর্মপদ নিজে মন্দিরের চূড়ায় গিয়ে ওই মুকুট স্থাপন করে যা একটি চুম্বকীয় তত্ত্বের উপর নির্ভর করে। কোণার্কের সূর্য মূর্তি দুটি চুম্বকের মধ্যে ঝুলন্ত অবস্থায় স্থাপন করা হয়। আমরা জানি, চুম্বকীয় তত্ত্বে সম মেরু পরস্পরকে বিকর্ষণ করে (according to the laws of magnetism, like poles repel each other)। ওই তত্ত্ব অনুযায়ী দুটি সমান মেরুর, সমান আকারের এবং সমান ওজনের চুম্বকের মধ্যিখানে সূর্য মূর্তিটি ঝুলন্ত অবস্থায় স্থাপন করা এক বিশাল প্রযুক্তি জ্ঞানের প্রমাণ দেয়। এই অসম্ভব কার্য ধর্মপদের দ্বারা সুসম্পন্ন হয়। কিন্তু রাজার কানে ওই কথা পৌঁছলে সমস্ত মহারাণার মস্তকচ্ছেদন সুনিশ্চিত ছিল। তাই ১২০০ মহারাণা (প্রস্তর শিল্পী) বিশু মহারানাকে তার পুত্রকে অপসারণের জন্য তাকে হত্যা করার কথা বলে। ১২০০ মহারাণার জীবন রক্ষা করে ওই নাবালক ধর্মপদ। নিজে ধর্মপদ ওই কাজ সম্পাদনের পর মন্দির চূড়া থেকে আত্মাহুতি দেয় সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে, যার করুণ ইতিহাস কোণার্কের মন্দির গাত্রে প্রতিধ্বনিত। এই করুণ গাথা সকল শিল্পীকে স্তম্ভিত করে। কিন্তু কেউ কিছু বলে না। রাজা মহারাণাদের কাজে সন্তুষ্ট হয়ে পুরস্কার দেন। ধর্মপদের আত্মবলির কথা চিরকালের জন্য নেপথ্যে থেকে যায়। তারই অভিশাপে হয়তো কোণার্কের ভাস্কর্য অতুলনীয় হয়েও পৃথিবীতে তার সঠিক মূল্যায়ন হয়নি, এবং মূল সূর্য মূর্তি ধ্বংস হয়ে যায়। 

মন্দিরের বেদী থেকে শুরু করে চূড়া পর্যন্ত প্রতি ইঞ্চি জায়গায় পাথরের ভাস্কর্য ও কারুকার্য রয়েছে। দেবতা, অপ্সরা, কিন্নর, যক্ষ, গন্ধর্ব, নাগ, মানুষ, বিভিন্ন প্রাণী, পৌরাণিক বিভিন্ন ঘটনার প্রতিরূপ, নৃত্যরত নরনারী, প্রেমিক যুগল, রাজদরবারের বিভিন্ন দৃশ্য, শিকারের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পাথরের বুকে।মূর্তিগুলোর মানবিক আবেদন, নিখুঁত গড়ন, লীলায়িত ভঙ্গী শিল্পকলার চরম উৎকর্ষের নিদর্শন। কলিঙ্গ রীতিতে নির্মিত মন্দিরের চূড়াগুলো পিরামিড আকৃতির। মন্দিরের সামনে রয়েছে নাট্ নাটমণ্ডপ। এখানে একসময় দেবদাসীরা দেবতার উদ্দেশ্যে পূজানৃত্য পরিবেশন করতেন। মন্দিরের ভিতরে রয়েছে নাট্যমন্দির, ভোগমন্দির ও গর্ভগৃহ। মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ৮৫৭ ফুট। তবে মন্দিরের অনেক অংশ এখন বালিতে দেবে গেছে। মন্দিরের দেউল এখনো ২০০ ফুট উঁচু। মন্দিরে সূর্যদেবতার যে বিশাল বিগ্রহ ছিল তা এখন নেই। কালের করাল গ্রাসে স্থাপত্যের অনেকটাই আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত। বাংলার সুলতান সুলেমান খান এর সেনাপতি কালাপাহাড়ের আক্রমণে কোণার্ক মন্দির প্রথম ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। উড়িষ্যার ইতিহাস অনুযায়ী কালাপাহাড় ১৫০৮ সালে কোণার্ক আক্রমণ করে। ১৬২৬ সালে খুরদার তৎকালীন রাজা পুরুষোত্তম দেবের পুত্র নরসিংহ দেব সূর্যদেবের বিগ্রহটি পুরীর জগন্নাথের মন্দিরে নিয়ে যান। তিনি কোণার্ক মন্দির থেকে কারুকার্য করা অনেক পাথর পুরীর মন্দিরে নিয়ে যান। মারাঠা শাসনামলে কোণার্ক মন্দির থেকে অনেক ভাস্কর্য ও প্রস্তরখন্ড পুরীতে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৭৭৯ সালে কোণার্ক থেকে অরুণ স্তম্ভ নামে বিশাল একটি স্তম্ভ নিয়ে পুরীর সিংহদ্বারের সামনে স্থাপন করা হয়। ওই স্তম্ভটি এখনও বিদ্যমান. এবং এটি একটি গ্রানাইট পাথরের তৈরি। এই সময় মারাঠা প্রশাসন কোনার্কের নাটমণ্ডপটি অপ্রয়োজনীয় মনে করে ভেঙ্গে ফেলে।

সূর্যদেবের বিগ্রহ অপসারণের পর কোনার্কে পূজা ও আরতি বন্ধ হয়ে যায়। পর্তুগীজ জলদস্যুদের ক্রমাগত আক্রমণের ফলে কোণার্ক বন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়।

আঠারশ' শতক নাগাদ কোণার্ক মন্দির তার সকল গৌরব হারিয়ে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। মন্দিরের অনেক অংশ বালির নিচে চাপা পড়ে যায়।মন্দির চত্বর ও এর আশেপাশের এলাকা ধীরে ধীরে ঘন অরণ্যে ছেয়ে যায়। বন্য জন্তুরা বাসা বাঁধে মন্দিরের ভিতর। জলদস্যু ও ডাকাতের আস্তানায় পরিণত হয় কোণার্ক মন্দির। সেসময় দিনের আলোতেও সাধারণ মানুষ ভয়ে এর ত্রিসীমানায় যেত না। বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে প্রত্নতত্ববিদরা কোণার্ক মন্দির পুনরাবিষ্কার করেন। খননের ফলে লোকচক্ষুর সামনে উন্মোচিত হয় কোণার্ক মন্দিরের অপূর্ব স্থাপত্য শৈলী, বিস্ময়কর ভাস্কর্যকীর্তি ও অনন্য শিল্প সম্ভার।কোণার্ক মন্দিরের অনেক শিল্প কীর্তি এখন সূর্য মন্দির জাদুঘর ও উড়িষ্যার জাতীয় জাদুঘরে রয়েছে। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী কোনার্কের সূর্য মন্দির দেখতে আসেন। প্রাচীন ভারতীয় স্থপতি ও ভাস্করদের শিল্পনৈপুণ্য ও সৃষ্টিশীলতা আজও মানুষকে বিস্ময় বিমুগ্ধ করে।

কোণার্ক সূর্য মন্দির এখন Archaeological Survey of India (ASI)র অধীনে। পর্তুগীজ জলদস্যুদের দস্যুবৃত্তি করতে অসুবিধা হওয়ার জন্য তারা মন্দিরের মাথায় অবস্থিত অতি শক্তিশালী চুম্বকটিকে নষ্ট করে দেয়। এখনকার কোণার্ক সূর্য মন্দিরের ভিতরে বালি দিয়ে ভরা। প্রবেশ নিষেধ। মন্দিরের পাশে ঘুরতে হয়।

এই মন্দিরের পরিসীমার ভিতর অনেকগুলি ছোট ছোট মন্দির আছে। মন্দিরের কিছু দূরে প্রত্নতাত্বিক মিউজিয়াম আছে যা শুক্রবার বন্ধ থাকে। ইতিহাস বলে, কালাপাহাড়ের আক্রমণে প্রধান মন্দির ধ্বংস হয়ে যায়। এখন যেটি আছে সেটি মুখ-শালা বা সিংহদ্বার। এই মন্দিরটি UNESCO থেকে World Heritage Site ঘোষিত হয়েছে। ভারতের ৭ টি আশ্চর্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে কোণার্ক একটি (এন ডি টিভির মতে)।

চন্দ্রভাগাঃ-

কোনার্কের কাছে সমুদ্র সৈকত ‘চন্দ্রভাগা’ নামে পরিচিত। এটি একটি তীর্থ স্থানে পরিণত হয় মাঘী সপ্তমীর দিন। ওই দিন এখানে লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী আসেন চন্দ্রভাগাতে ডুব দেওয়ার জন্য। কোণার্কের সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য অপরূপ। কোণার্ক থেকে ঢ়িল ছোঁড়া দূরত্বে এই সমুদ্র সৈকত না দেখলে কোণার্ক দেখা সম্পূর্ণ হয় না। পরিষ্কার বালি এবং ঘূর্ণায়মান ঢেউ। শীতল নীল সমুদ্র সৈকত দীর্ঘ প্রসারিত। সঙ্গে সৈকতের নিজস্ব সুদৃশ্য নির্মলতা আছে। এখানে আন্তর্জাতিক ইয়টিং (Yachting) প্রতিযোগিতা হয়। দেশ বিদেশ থেকে বহু প্রতিযোগী আসেন এই প্রতিযোগিতায় ভাগ নিতে।

কোণার্ক মুক্তাঙ্গন নৃত্য উৎসবঃ-

কোণার্কের সূর্য মন্দির একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। প্রত্যেক বছর এখানে কোণার্ক মুক্তাঙ্গন নৃত্য উৎসব (Open Air Auditorium for Konarak Dance Festival) ডিসেম্বর মাসে হয়। ১লা ডিসেম্বর থেকে ৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত কোণার্ক নৃত্য উৎসব চলে। সারা ভারতবর্ষ থেকে এখানে বহু শিল্পী আসেন নৃত্য পরিবেশন করতে। সারা রাত এই অনুষ্ঠান হয় ফ্লাড লাইট জ্বালিয়ে। সারা রাত ওড়িশি, কুচিপুড়ি, কথাকলি, ভারতনাট্যম, মোহিনী আট্যম, কত্থক, মনিপুরী, ইত্যাদি প্রায় প্রত্যেক প্রদেশের নৃত্য প্রদর্শিত হয়। এখানে প্রসিদ্ধ নৃত্য শিল্পী বিরজু মহারাজ, কেলু চরণ মহাপাত্র, সোনাল মান সিংহ, সুধা চন্দ্রন, পদ্মা সুভ্র্যমন্যম, হেমা মালিনী, মল্লিকা সারাভাই, প্রমুখ নৃত্য জগতের প্রসিদ্ধ শিল্পীরা তাঁদের নৃত্যকলা প্রদর্শন করে দর্শককে মুগ্ধ করেন। এ ছাড়া বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পীরাও আসেন, যেমন পৃথিবী বিখ্যাত শরদ শিল্পী ওস্তাদ আমজাদ আলী খাঁ, বংশীবাদক পণ্ডিত হরি প্রসাদ চৌরসিয়া, তবলা শিল্পী ওস্তাদ জাকির হোসেন, সন্তুরশিল্পী পণ্ডিত শিব কুমার শর্মা প্রমুখ

কি করে কোণার্ক যাবেনঃ- 

বলা বাহুল্য ভবঘুরে বাঙালী পুরী-কোণার্ক না ঘুরেছে এরকম বোধ হয় কেউ নেই। পুরী এবং ভুবনেশ্বর থেকে বাস কোণার্ক যায়। এ ছাড়া মেরু ট্যাক্সি এবং অন্য ট্র্যাভেল এজেন্সি ট্যাক্সি ভাড়া দেন টুরিস্টদের। এখানে রাত্রে থাকার ব্যবস্থাও আছে। ভুবনেশ্বর থেকে ৫৮ কিলোমিটার এবং পুরী থেকে মাত্র ৩৬ কিলো মিটার যাত্রা করলেই কোণার্ক পৌঁছে যাবেন অনায়াসে। ভুবনেশ্বর থেকে ছয় লেনের সুন্দর রাস্তা পিপিলি বাইপাস দিয়ে যাওয়া যায়। প্রায় ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট লাগে প্রাইভেট কারে গেলে। এছাড়া অটো, ট্রেকার, টাটা এস আছে তবে ওগুলো সুবিধের নয়। কোণার্কের এস.টী.ডি কোড ০৬৭৫৮। এখানে থাকার জন্য প্রচুর হোটেল আছে। উড়িষ্যা রাজ্য সরকারে পরিচালনায় ও টি ডি সি র পান্থনিবাস। চন্দ্রভাগার কাছে ৩ স্টার “লোটাস হোটেল” খুব সুন্দর। ওখানে সুন্দর কটেজ আছে সমুদ্র সৈকতে। বোটিং এর সুবিধে আছে। আমরা ওখানে স্বপরিবারে এক দিন কাটিয়েছি। 










Tuesday, July 14, 2015

যখন হাত বাড়ালেই আকাশ ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী ১৫.০৭.২০১৫ বুধবার , সকাল ১০.৪৯



  

      
যখন হাত বাড়ালেই আকাশ
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী  ১৫.০৭.২০১৫ বুধবার , সকাল ১০.৪৯
দেশলাইয়ের বাক্সটায় বিড়ি ঠুকতে ঠুকতে করিম চাচা বলে , ভাড়া বিশ টাকা লিবো যাইতে হইলে চল না হলে অন্য কারে ডাক ।
... সে কি ! তোমারে না কাল থেকে বলেছি আমার ইন্টারভ্যু আছে দশটায় । এখান থেকে ষ্টেশন পৌঁছতে কুড়ি মিনিট লাগবে । অত টাকা কেন চাও । গ্রামের ভ্যান রিক্সা , গ্রামের ছেলেদের কাজে আসবে না ত কাদের কাজে আসবে ?
...তা আমি কি করবো ! আমার ও ত প্যাটটারে খিধা লাগে না কি , তার ওপর ছাওলদের প্যাটের খিধা , বিবির আজ এটা কাল ওটা । আমার কি ভালো লাগে তদের লইগ্যা চাইতে ?
...উপায় না দেখে অর্ণব উঠে পড়ে । বসেই বলে তাড়া তাড়ি চল লোকালের টাইম হয়ে
গিয়েছে । 
...তর অত তাড়া কিসের ? আমি তরে ঠিক সময় ইষ্টিসনে পৌঁছে দিমু। চাকরি পেলে খাওয়াইবি  ত না কি চাচারে ভুইলা যাবি । দম বিরিয়ানি খামু  বলে খক খক করে কাশে ।  
দুর্গা দুর্গা বলে সারা রাস্তা অর্ণব ওই খেঁকুড়ে বুড়ো করিম চাচা নামক  বুড়োটাকে বরদাস্ত করে । স্টেশন পৌঁছতেই অর্ণবের ধড়ে প্রাণ এলো । ভাড়া মিটিয়ে নেমে পোঁ পা ছোটে ষ্টেশনে । গাড়ি ইন করতে সময় আরও বাকি । টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে অপেক্ষা করে প্ল্যাট ফর্মের ধারে । আজকের টাইমস অফ ইন্ডিয়া কাগজটা কিনে চোখ বুলিয়ে নেয় । আজকাল সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় viva তে কি প্রশ্ন সব হতে পারে তা কেউ বলতে পারেনা । স্রেফ ভাগ্যের ওপর নির্ভর আর ঠাকুরের আশীর্বাদ না থাকলে ...... 
ট্রেন এসেগেল । বাঁচা গেল । একটা বসার যায়গা পেয়ে-গেল অর্ণব। মনে মনে নিজেকেই প্রশ্ন করে চলে । বিগ ব্যাং থেকে ন্যানো টেকনোলজি .. গ্লোবাল ওয়ার্মিং  আরো কত সব কি । অর্ণব ফিজিক্স নিয়ে এম.এস.সির পর এম.ফিল করে । পি.এচ.ডি র জন্য চেষ্টা করছে । কোন ভালো প্রতিষ্ঠানে ও রিসার্চ করতে চায়। সিভিল সার্ভিস না পেলে রিসার্চ করবে। বাইরে কোথাও চলে যাবে । যেখানে অধ্যাপকের সম্মান আছে সেই ইউনিভার্সিটি ওর পছন্দের তালিকায় । বাবা মার অমত থাকলেও নিজের ক্যারিয়ার এর জন্য বাইরে যেতেই হবে । 

সিভিল সার্ভিস মেন ক্লিয়ার করে ভাইভা দিতে গেলে অনেক বিষয়ে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন । কি প্রশ্ন আসবে কেউ জানেনা । ওদের অঞ্চল-থেকে ওই বোধহয় এক মাত্র ক্যান্ডিডেট । ও ইন্টিমেসন  লেটার পেয়ে খুশি ছিল । বাবা মা এই বিষয়ে অতটা বোঝেন না । ছাত্র ছাত্রীরা এই সম্বাদ পেয়ে সকলে তাদের স্যারকে অভিনন্দন জানায় ।  ওর মা খুব ই সাদা মাটা মানুষ।   বাবা প্রাইভেট ফার্মের চাকরি। সর্বদাই টেনশনে থাকেন। ওনাদের প্রতিক্রিয়া সেরকম ছিলনা । তবুও মা বলেন ,  হ্যাঁরে তুই কি বাইরে চলে যাবি আমাদের ছেড়ে ?”
অর্ণবের প্রতিক্রিয়া কিছুই ছিলোনা । শুধু বলে এখন কিছুই বলতে পারবোনা । তবে যেখানে যাব তোমাদের সঙ্গে নিয়ে যাব ।

অর্ণব ভালো ছেলে । টিউশনি করে পড়ার খরচ চালাত । আজকাল ফিজিক্সের টিচারের অনেক দর । উচ্চ মাধ্যমিকের ছেলে মেয়েদের অঙ্ক ফিজিক্স দুটোই পড়াত । তা ছাড়া আই আই টি এবং জয়েন্ট এন্ট্রান্সের জন্য খুব ভালো কোচিং দিত। ওর নাম আছে সেই বিষয় । নিজের কোচিং ক্লাস করলে বেশ দু পয়সা রোজগার হত কিন্তু ওর ইচ্ছা ছিল আই.এ.এস অফিসার হওয়ার । তাই ও সব সময় ছাত্রদের বলত ঃ   অল্পে সন্তুষ্ট হলে তোমার লক্ষ্য পূরণ হবেনা । অধ্যবসায় , মেধা , ব্যক্তি চরিত্র  দুটোরই প্রয়োজন । শুধু ভালো ছাত্র হলে চলবেনা । ভালো মানুষ হতে হবে। মা বাবাকে কখন অবজ্ঞা করবেনা । তাঁদের আশীর্বাদ ছাড়া সাফল্য অসম্ভব। এ যুগে সব অধঃপতনের মূল কু শিক্ষা কু সঙ্গ । আমি তোমাদের স্বামী বিবেকানন্দ হতে বলছিনা কিন্তু তাঁর আদর্শকে অনুসরণ কর । মহিলাদের সম্মান দাও তারা তোমাদের মা , বোন , মাসি , পিসী , মামি ......... । এ যুগে এটার ই বড্ড অভাব। আমি যদি ভগবানের আশীর্বাদে আই.এ.এস অফিসার হতে পারি আমার প্রথম কর্তব্য যে কথাগুলো তোমাদের বললাম সেগুল কর্ম ক্ষেত্রে করে দেখান ।

ওর ছাত্র ছাত্রীরা এই জন্য ওদের স্যারকে শ্রদ্ধা করতো , সম্মান করত । আজকাল এরকম শিক্ষক পাওয়া বিরল।  অর্ণব আরো বলত অর্থ উপার্জনের জন্য অর্থের পশ্চাৎ ধাবন বাঞ্ছনীয় নয়।   নিজের মনকে আয়ত্তে রাখলে তবেই সফলতার শিখরে পৌঁছন যায়।
এসব ভাবার সময় এটা নয় । প্রসংগ পাল্টালো ......... 


 দ্বিতীয় পর্ব

অর্ণব ১০ টার আগে পৌঁছে যায় নির্ধারিত স্থানে । প্রায় ১০০ জনের ওপর ইন্টার্ভিউ দিতে এসেছেন বিভিন্ন জায়গা থেকে । একে একে প্রায় ১০জনের পর ওর নাম ঘোষণা হল। প্রথম সিভিল সার্ভিসের জন্য ইন্টার্ভিউ একটু নার্ভাস তো লাগবেই ।
অর্ণব ভালো করে যানে ইন্টার-ভিউয়াররা ;  ম্যানারিসম , স্মার্টনেস , টু দি পয়েন্ট উত্তর সিভিল সার্ভিসের ভাইভাতে অনেক প্রাধান্য দেন । সিভিল সার্ভিসের প্রিলিমিনারি , ফাইনাল ,ভাইভা সব গুলো ইম্পরট্যান্ট । এখন ওর ফাইনালে কত মার্ক আছে সেটা নির্ভর করছে সিলেকশনের ওপর কারন দুটো মিলে র‍্যাঙ্ক ঘোষণা হবে । ভগবানের আশীর্বাদে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছে তবে স্মার্ট সিটিতে আরও কিছু বলার ছিল কিন্তু চেয়ারম্যান থামিয়ে দেন। তবুও যা বলেছে মনেহয় যথেষ্ট । 
ইন্টার্ভিউয়ের পর বাড়ি ফেরার পালা ।

একটা ট্যাক্সি নিয়ে সোজা শিয়ালদাহ ষ্টেশন চলে যায় । ওখানেই সামনের হোটেলে লাঞ্চটা সেরে ফেলে । খুব খিদে পেয়েছিল তাই হোটেলেই লাঞ্চ সারে । ষ্টেশনে পৌঁছে টিকিট কাউন্টার-থেকে  টিকিট কেটে সোজা কৃষ্ণনগর লোকাল ট্রেনে উঠে পড়ে । সারা দিন খুব পরিশ্রম গিয়েছে এখন একটু বিশ্রামের প্রয়োজন । ট্রেনের কামরায় উঠে জানলার ধারে একটা বসার যায়গা পেয়ে যায়। কখন ঘুমিয়ে পড়েছে জানেনা । হটাত মোবাইলটা বেজে ওঠে। বিরক্তির সহকারে কল রিসিভ করে। ওদিকে চেনা গলার স্বর ।
কিরে কেমন ইন্টার্ভিউ দিলি ? আমি কে বলতো ?
ও মাসি ! হটাত অনেক দিন পর ... তোমরা কেমন আছো ? হ্যাঁ ইন্টার্ভিউ ভালোই দিলাম । তবে কিছুই বলা যায়না । সব ভগবানের কৃপা । ট্রেনের মধ্যে কি ভালো শোনা যায়। আমি বাড়ি পৌঁছে তোমায় কল করবো ।
চিন্তা করিস না তুই ঠিক পেয়ে-যাবি । আজ পর্যন্ত তুই সবে ......... পরেরটা কিছু শোনা গেলনা...।

মোবাইল পকেটে রেখে একটু চোখ বুজেছে কি ... লেবু লজেন্স ... হজমি... ধুপ-কাঠি সব একসঙ্গে হকারদের চিৎকার । ওদের ই বা দোষ কি এই ভারতে বিশেষ করে আমাদের পশ্চিম বঙ্গে নিম্ন মধ্যবিত্ত আয় বর্গের ছেলে মেয়েরা পড়াশুনো করে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে নিজেদের অন্ন  সংস্থানের  জন্য । সকলে ত মেধাবী ছাত্র ছাত্রী নয় । তাদের শিক্ষার পর সামান্য চাকরি পাওয়া খুব ই  মুস্কিল । তাই যে যেমন পথেই হোক নিজের পেটটা চালানোর জন্য নানান রুজি রোজগারের পথ বেছে নিচ্ছে ।
এর মধ্যে ওর ষ্টেশন এসে-গেল । প্ল্যাটফর্মে নেবেই হাঁটা দিল ওভার ব্রিজের দিকে। সন্ধ্যে প্রায়  হয়ে এলো । ষ্টেশন থেকে বাড়ি বেশ পথ । সকালে করিম চাচা ছিল এখন তার টিকি নেই । চাচার এখন শুঁড়ি খানায় যাওয়ার সময় ।  এখন ভ্যান রিক্সা বলতে একটা দুটো আছে । অর্ণব হেঁটেই যাবে স্থির করলো । হাঁটা পথ ঘণ্টা খানেক নেবে । নিজের মনে গুন গুন করতে করতে এই গানটা ধরল ...
আমি পথভোলা এক পথিক এসেছি 
সন্ধ্যা বেলার চামেলীগো,সকাল বেলার মল্লিকা
আমায় চেন কি?” ...
অর্ণব ওর বয়েস  আন্দাজে রুচি সম্পূর্ণ এবং ওর গানের সিলেকশন ও অন্য রকমের । নানা চিন্তা এবং তর্ক বিতর্ক মনে এলো ...। এইতো সেদিন অর্ণবের এক বন্ধু বলছিল , “আমরা বুঝিনা কোয়াণ্টম থিওরি ; কিন্তু রবীন্দ্রনাথ  বুঝতেন ?” 
আমি  শুধু হেসে মাথা নেড়েছিলাম। ভাবছি এই পরিসরে তার সংক্ষিপ্ত একটা আলোচনা সেরে নি  ,পরে না হয়   অন্য কোন আলোচনায় আসবো ... বন্ধুটি বলতে লাগলো...

পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র না হয়ে , ইন্টারনেট আর দুএকটি বই পড়ে আমরা যেটুকু বুঝেছি , রবীন্দ্রনাথের মত একজন বিশ্বকবি ,স্বয়ং আইনস্টাইনের সাথে আলাপ ক'রে ,এতটুকু ও কম  বোঝেননি। উনি এতটাই হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছিলেন যে নিজের মতামতে অটুট থেকে আইনস্টাইনের সাথে বিতর্কে গিয়েছিলেন। ১৯৩০ সালের ১৪ই জুলাই তারিখে কবি ও বিজ্ঞানীর এ কথাবার্তা রিলিজিয়ন অব ম্যান বইটিতে প্রকাশিত হয় এবং ১৯৩০সালের ১০ই আগস্ট, 'নিউইয়র্ক টাইমস' এ প্রকাশিত হয়। 
আমি বলি , “জানতাম না যাক ভালোই হল তুই বললি আমার ইন্টার্ভিউ তে কাজে লাগবে    
বাড়ি এসে-গেল ।

মা সন্ধ্যা দিচ্ছিলেন । আমাকে দেখে ইশারায় ঘরে যেতে বলেন ।
হাত পা ধুয়ে গামছায় মুছে ঘরে গিয়ে দেখি বাবার সঙ্গে এক ভদ্রলোক কথা বলছেন।
আমি নিজের ঘরে যাচ্ছিলাম হটাত বাবার ডাকে পেছন ফিরি ।
বাবা পরিচয় করিয়ে দেন ইনি আমাদের মিলের মালিকের ছেলে
হ্যালো আমি সিদ্ধার্থ জৈন ।  
অর্ণব ব্যানার্জী ।  
সিদ্ধার্থ - হ্যাঁ শুনেছি আপনার নাম । আপনার স্টুডেন্টরা ভালো র‍্যাঙ্ক রাখে জয়েন্ট এনট্রান্সে ।
অর্ণব - ও তাই ।
সিদ্ধার্থ - আমার মেয়ে এবারে বারো ক্লাস সাইন্স নিয়ে পাস করলো । আইআইটি এনট্রানসে বসার ইচ্ছা। আপনি একটু গাইড করলে অনেক উপকার হত ।
অর্ণব  আমি খুব ই ব্যাস্ত । হয়তো আমাকে দিল্লী যেতে হবে । কথা দিতে পাচ্ছিনা । আপনি বাবার সঙ্গে যোগা যোগ রাখবেন সম্ভব হলে নিশ্চই কিছু উপায় হয়ে যাবে । এই বলে বিদায় নেয় ।
ঘরে গিয়ে প্রথমেই মাসীকে কল করে ।
ওপার থেকে মাসী  ... হ্যাঁরে এতক্ষনে পৌঁছলি ।  
আর বোলনা ট্রেনে যা ভীড় । ভারতের জন গণনা লোকাল ট্রেনে হলে ঠিক হিসেব বেরুত । পা রাখার ঠাইঁ নেই।
তা যা বলেছিস । তুই দিল্লী কবে আসবি ? মেসো ত তোর আসার অপেক্ষায় দিন গুনছেন ।
কি যে বল মাসী , গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল । আগে দেখ কি হয়...
ও ঠিক হয়ে যাবে । আমি মানত করেছি  বৈষ্ণ দেবীর কাছে । হলে তোকে মায়ের মন্দির দর্শন করিয়ে পুজো দিয়ে আসবো । তোর মা কোথায় ?
পুজো করছে ।
ও তবে পরে কথা হবেখন । আহা সারা জীবন দুঃখে কাটলো এবার ভগবান সুদিন দেবেন বোধ হয় । তোর মাকে বলিস আমি ফোন করেছিলাম বলে।  
বলেদেব । ফোনটা রেখে ঠাকুর ঘরে যায় সন্ধ্যারতি করতে । ব্রাহ্মনের ছেলে সকাল সন্ধ্যা গায়ত্রী জপ অতি অবশ্যই করা উচিৎ ।

রাতে আরেকটা ফোন এলো অন্বেষার কাছ থেকে । অন্বেষা অর্ণবের কলেজের বন্ধু । ও দিল্লীথেকে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিয়েছে । ওখানেই কোচিং নিয়েছে । বাবার টাকা আছে তাই ওর চিন্তা কি ?
হ্যাঁরে কেমন ইন্টার্ভিউ দিলি ?
সো সো । তুই ?
বাজে বকিসনা । আমি জানি তুই খুব ভালো প্রিপারেসন করেছিলি । আমি ওই একরকম । সব ই আন প্রেডিক্টেব্ল , বল !
হ্যাঁ । তা ঠিক ।
এবারে পনেরো দিনের মধ্যে রেসাল্ট বেরুবে । মানে ধর পরের মাসের ১৫ তারিখ নাগাদ তুই ইন্টার নেটে পেয়েযাবি তোর অল ইন্ডিয়া র‍্যাঙ্ক ।
তুইত আছিস ... আমায় জানিয়ে দিবি কি বল ?
হেঁয়ালি করিসনা । তোর কি প্ল্যান বল ?
আমার আবার কি ? আমি টিউশনি করে চলি ......
ঠিক আছে রাখছি । বাই ......
বাই ।

অর্ণবের সিভিল সার্ভিসের ফল জেনে বিভিন্ন খবরের কাগজ এর প্রতিনিধিরা ওর ইন্টার্ভিউ র  ভিডিও রেকর্ডিং করে নিয়ে যান। কাল দিল্লী-থেকে ফোন এসেছিল ইউ পি এস সি র অফিস থেকে । অভিনন্দন জানিয়ে ইউ পি এস সি বলে অর্ণবের অল ইন্ডিয়া র‍্যাঙ্ক ১০৮ । ওয়েব সাইট থেকে ডিটেলস ডাউন লোড করে নির্দেশ অনুযায়ী সব কাজ করতে। 
অন্বেষার ১০০২  ওর কাছ থেকেই জানে । ওকেও অর্ণব অভিনন্দন জানায় ।
অর্ণবের এত দিনের সাধনা সফল হল । ওর মনে হয়েছিল ও সিভিল সার্ভিস এবারে হয়তো  পেতে-পারে কারন প্রিলিমিনারি , ফাইনাল ও ভাইভা সব ভালো হয়েছিল। তবুও আশঙ্কা ছিল বলা ত যায়না ।
মা বাবার খুশীর ফোয়ারা ছোটে । গ্রামের সব গুনি মানুষ আসেন ওকে শুভেচ্ছা জানাতে । ওর স্কুলের মাষ্টার মশাই ছুটে আসেন ওর ঘরে । ওকে জড়িয়ে ধরে বলেন আমার জীবিত অবস্থায় এই সুখবর আমাকে আমার মাষ্টারের জীবনের সার্থকতা এনে দিল । আমি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি তোর আরও উন্নতির জন্য । আজ আমি সব চেয়ে খুশি   

অর্ণব মাষ্টার মশাই এর পায়ের ধুলো নিয়ে ওনার আশীর্বাদ নেয় । বাবা মা এবং সকল গুরু জনদের প্রণাম সেরে দক্ষিণেশ্বরে মায়ের দর্শনে বেরিয়ে পড়ে ।
মায়ের দর্শন সেরে ফিরে আসে । দিল্লী যাওয়ার আয়োজন করে । তৎকালে টিকিট রিসার্ভে-সন করে নেয় রাজধানীর । শিয়ালদহ রাজধানী এক্সপ্রেস হওয়াতে ওদের অনেক সুবিধে হয়েছে ।
মাসীকে বলাতে মাসী খুশীতে আত্মহারা । মেসো অভিনন্দন তথা শুভেচ্ছা জানান ।
আজ সকলের আশীর্বাদ না থাকলে কিছুতেই এই সাফল্য হত না। তাই অর্ণব ঈশ্বর বিশ্বাসী ।
সমুদায় ৯ লক্ষ ৪০ হাজার পরীক্ষার্থী র মধ্যে ১৭০০০ লিখিত পরীক্ষায় কৃতকার্য হয় ৩৩০০ জনকে ইন্টার্ভিউর জন্য ডাকা হয় এবং ১২৩৬ জনকে নিয়োগ পত্র পাঠান হয় । ১২৩৬ জনের মধ্যে ১০৮ অসাধারণ সাফল্য এটা এক বাক্যে সকলে স্বীকার করবেন। 
অর্ণব দিল্লী গিয়ে মাসীর বাড়িতে ওঠে । ওখানে অন্বেষার সঙ্গে দেখা হয় । দুজনে সমস্ত প্ল্যানিং করে মুসুরি যাত্রার। 

তারপর দিল্লী থেকে মুসুরি যাত্রা করে । ওখানে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ন্যাশনাল একাডেমী অফ    এডমিনিস্ট্রেশন , মুসুরি তে এক বছরের ট্রেনিং । কর্মশালা বিল্ডিং এ  সারা ভারতবর্ষের  আই।এ।এস অফিসার গন একত্রীত হন তালিমের জন্য । এই সময় ওনাদের সমস্ত বিষয় পুঙ্খানু পুঙ্খ ভাবে তালিম দেওয়া হয় যেমন আইন শৃঙ্খলা , রাজস্ব , অর্থনীতি ইত্যাদি তে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় । 
প্রায় এক বছরের ট্রেনিং এর পর দুজনে ফেরেন স্বদেশে । এর মধ্যে ওদের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের সম্পর্ক সৃষ্টি হয় প্রায় অজান্তেই । এটাই প্রায় ঘটে ওই ট্রেনিং এর সময়। যে যার পার্টনার নির্বাচন করে ।
ওদের দুজনের বিয়ে হয়ে যায় । অর্ণব এবং অন্বেষা এখন স্বামী  স্ত্রী । খুব ধুম ধাম না হলেও ভালো ভাবেই বিয়ে হয় দিল্লীতে । 

অর্ণব সামান্য ঘরের ছেলে হয়েও নিজের মেধা এবং অধ্যবসায়ের বলে ভারত বর্ষের সম্মান জনক পরীক্ষা সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সম্মানের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয় । তাই যখন হাত বাড়ালেই আকাশ আর পা বাড়ালেই রাস্তা তখন ভুল রাস্তায় না গিয়ে ঠিক রাস্তায় যুব সমাজ গেলে নিশ্চয় তার লক্ষ্য স্থলে পৌঁছবে অর্থাৎ আকাশ ছুঁতে সক্ষম হবে এতে সন্দেহ নেই।