ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
আকাংক্ষা ,পারোমিতা দুই বোন । দুজনের বয়েসের
ব্যাবধান মাত্র
এক বছর। দুই বোনই এক ইংলিশ মিডিয়াম কোএড্ স্কুলে পডে । স্কুল
বাস আসে সকাল ৭.৩০ টার সময় । শীতে কুঁকডে দুজনে বিছানা থেকে
ওঠে সকাল ৬.৩০ টার সময়। সটান্ বাথরুমে ঢুকে নিত্যকর্ম সেরে বেরুনোর
সময় ৭.০০ টা বেজে পাঁচ কি দশ মিনিট । তার পর খাওয়া সেরে বাসের
জন্য অপেক্ষা । আরম্ভ হয় সারা দিনের জমে থাকা কিছু গল্প আর
বয় ফ্রেন্ডদের নিয়ে কিছু ছুঁক ছুঁকুনির কথা । যাকে বলে চুলবুলি লেডকি
হিন্দিতে । উপায় নেই যুগের টানে এরকমটা হবেই । মানুষের কিছু জেনেটিক
আর একুয়ার্ড ক্যারেক্টার থাকে । কোন কোন সময় একুয়ার্ড
ক্যারেক্টারটা বেশি মাত্রায় প্রকাশিত হয় ।সেগুল ভাল হতে পারে আবার
খারাপ ও হতে পারে । যদি খারাপের দিকে যায় তবে সর্বনাশ। সামাজিক
দিক থেকে ভয়ঙ্কর ও হতে পারে। যা বাবা মা ভাই বোনের মাথা ব্যাথার
কারন হয়। ধরাজাগ সেইরকম ই ক্যারেক্টারের মেয়ে পারোমিতা ।
আকাংক্ষা একটু আলাদা ও
পডাশুনোর গল্প বেশি করে বন্ধুদের সঙ্গে
। কিছু প্রব্লেমের কথা যা হয়তো সল্ভ হচ্ছেনা বা
অন্য কিছু ।ও
পডাশুনোতে ভাল । ক্লাসে বরা বর ফার্স্ট হয়
পারোমিতা ঠিক তার উল্টো। টিভি প্রোগ্রাম , সারুখ্ সল্মন হ্রিতিক্
আর বাংলার দেব ছাডা ভাবতেই পারিনা ।ও বলে মাস ক্লাস বাঙ্ক করে সিনেমা
যাওয়া র এক্সাইটমেন্ট ই আলাদা । ।টিচারকে এফ বি তে জন্মদিনে
গিফট পাঠানো ।লিটিল হনি বলে বয় ফ্রেন্ড কে চুমু খাওয়া । এসবে থৃল
আছে বল । কথাগুল বলে দম নেয় ।ওর দিদি এসব শুনেও শনেনা ।
সেদিন আকাংক্ষা খবরের কাগজে খবরটা পডে আতঙ্কিত হয় কারন ও
প্রত্যেক দিন বাসে কলেজ যায় ফেরে প্রায় রাত ৭ টার পর । খবরটা এই
রকম ঃ-:-“সকাল দশটায় ওদের কলেজের কাছা কাছি এক এলাকায়
চলন্ত বাসের ভিতরেই এক
তরুণীর হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দিল জনা চারেক মদ্যপ যুবক । উপায়
না দেখে চলন্ত বাস থেকেই লাফ দিয়ে নেমে ছুটতে ছুটতে
কলেজে পৌঁছলেন ওই তরুণী। জনা
কয়েক সহপাঠীকে কোনও
মতে ঘটনাটা জানিয়ে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে জ্ঞান হারালেন তিনি।
এই শহরের বুকে দিনের বেলায় আরও এক বার এই ঘটনা শহরের রাস্তায়
মহিলাদের নিরাপত্তার অভাবটাকেই ফের বেআব্রু করে দিল। দিল্লির
বাসে তরুণীকে গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঢেউ
উঠেছে, সে প্রতিবাদে গলা মিলিয়েছে আমাদের
শহরেও । কিন্তু তার পাশাপাশি
এই শহরের বাস এবং রাস্তাই বা আলাদা কিসের , এ প্রশ্নটাও
ক্রমশ জোরালো হচ্ছে”।
কাকে বলবে বোন তো পাত্তা দেয়না। বলে তোর বয় ফ্রেনড্ থাকলে
ওই তোকে প্রটেক্ট করবে । দিদি তুই ভারি আন্সমার্ট আর ভীতু ।
মাকে
বললে বলবেন আর পাঁচটা মেয়েদের মতন তুমি হতে চেষ্টা কর । এসব
কথা মনের ভেতর রেখে গুম্রছিল আকাংক্ষা । ও কি সত্যি আর পাঁচটা মেয়ের
মতন নয় ? তবে ওর পডাশুনো কি বৃথা ! মনের মধ্যে তোল্পাড করে
সব প্রশ্ন । আয়নার সামনে নিজেকে দেখে । ভরা যৌবনে মেয়েদের যা
সৌন্দর্যের বিকাশ হয় ওর ক্ষেত্রে সেরকম কিছু পরিপ্রকাশ পায়নি।
খুব সাধা মাটা মেয়ে । সাজতে জানেনা বললেই চলে । এতো সাধারণ মেয়ে
আজকাল খুব একটা চোখে পডেনা।
পরোমিতা ঠিক উল্টো। প্রসাধনের সামগ্রী কেনার চেয়ে গিফট্ বেসি
পায়। বয়ফ্রেন্ডের অভাব নেই । পারমিতা কে দেখতে সুন্দর এবং চোখ
ধাঁদানো চেহার । কস্মেটিক্স এর বাহারে ভুরু ভুরু গন্ধ । ছেলেদের
মন ভোলানো চেহারা । এখন থেকেই ডেঁপো । পডাশুনোয় অষ্টরম্ভা ।
কোনমতে পাস করে । টুকলি কোরতে ওস্তাদ্ বোধহয় । কিন্তু বুদ্ধি
প্রখর । ছেলেদের মাথায় টুপি পরাতে ওস্তাদ ।
আগেই বলেছি আকাংক্ষা ক্লাসে ফার্স্ট হয় । রিপোর্ট কার্ডে সই করার সময় বাপি
আকাংক্ষা কে খুব উৎসাহ দিয়ে বলেন ১২ ক্লাসে সাইন্সে রেঙ্ক্
রাখতেই হবে । এখন থেকে আই. আই . টির এন্ট্রান্সের
জন্য তৈরি হও
। তোমাকে খডগপুর আই আই টি তে ইঞ্জিনিয়ারিং পডাবো । ভাল রেসাল্ট
করলে জি. আর। . ই দিয়ে আমেরিকা পাঠাবো। বি .টেক্ এর
পর হয় গেট্
দাও নয় ক্যাট্ দাও । যদি এগুলো না দাও তবে ভাল রেসাল্ট করলে জি.
আর। . ই টা দেবে । এখন থেকে তৈরি হও আমেরিকা যাওয়ার জন্য ।
পারোমিতা ভয়ে ভয়ে বাবার কাছে যায় । বাপী জানেন ওর রেসাল্টের ব্যাপার ।
বাপী বলেন , মেয়েদের পডাশুন
যে কত প্রয়োজন তা এখন থেকে না বুঝলে
পরে আর সময় থাকবেনা মা । পডাশুনোতে মন দাও । মেয়েদের রূপ যৌবন
গুন তিনটে দিয়ে বিচার করার সময় রূপ যৌবন দুটোই কিন্তু বয়স
আধিক্যে ফুরিয়ে যায় মা;
থাকে শুধু গুনটা । ওটাই শেষ
জীবনের ভরসা । তোমার বন্ধুদের
জিঙ্গাসা কর ; ওরা কি ক্লাসে লাস্ট্ বেঞ্চে বসা মেয়েকে ভাল বলবে !
বাপীর টাকা মধু দাদার ভাঁড় নয় যে অফুরন্ত থাকবে । চিরদিন তো আমি
আর তোমার মা থাকবেন না । যাও মাকে দিয়ে সই করাও । ওঁচা মেয়েদের
আমি পছন্দ করিনা । তোমার তো সব বায়না শুনি তবুও তোমার এতো
অধঃপতন কেন? লজ্জা করেনা ?
দিদিকে
দেখে সেখ ।
বাপীর কথা শুনে ওর চোখে জল আসে । চোখে জল নিয়ে বলে পরের বার ভাল করব
। গড প্রমিস্ ।
থাক আর গড্ কে টেনোনা ! তিনি তোমাকে অহোরাত্র দেখছেন।
তোমার প্রাইভেট ট্যুটার এর প্রয়োজন হলে রাখ ।কিন্তু রেসাল্ট ভাল হওয়া
চাই।
মা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে আঁচল ঠিক করতে করতে বলেন , “রাম
রাম , প্রাইভেট টিউটর ? রক্ষে
কর ! আরেক ফ্যাসাদ বাঁধাবে । ও যা পডছে পডুক । না
পডলে হেঁসেল ঠেলবে!” আমার সময় কোথায় ওকে দেখার ?
এটাত কথা নয় । তুমি না দেখলে কে দেখবে ? বাপী বলেন।
কেন ওর দিদির কাছে বসে পডতে পারেনা ?
দেখ সুমি (মায়ের নাম সুমিতা , বাপী ‘সুমি’ বলে ডাকেন) তোমার মেয়েদের
প্রতি দায়িত্ব বোধ না থাকলে ওরা কি করবে ভবিষ্যতে? মা’র নজর
মেয়েদের দিকে বেশি থাকা উচিৎ । নাহলে পরে পস্তাবে ।
কেন? আমার একার দায়িত্ব কেন? তোমার মেয়ে নয় ওরা ? তোমার
কোন দায়িত্ব নেই !
‘দায়িত্ব’ শব্দটা খুব জোরদিয়ে বিদ্রূপের সঙ্গে উচ্চারণ করলেন
সুমিতা দেবী ।
আহ্ ! আমি কি তাই বলছি ! বোঝ
না কেন? আর সেরকম বুঝলে চাকরি
ছেডেদাও । তুমি ত সখে চাকরী কর ওটার কি কিছু প্রয়োজন আছে? যদি মেয়েরা মানুষ
না হল ওই চাকরী থাকার চেয়ে না থাকা ভাল !
কি ? আমি সেক্রিফাইস্ করবো আর উনি প্রাইভেট
সেক্রেটারি কে নিয়ে
টুরে যাবেন আজ মুম্বাই কাল দিল্লী পরশু সিঙ্গাপুর ।অফিস ছাড়া বাডীর হাল কি হচ্ছে
বুঝেছ কখন ! বাহ ! সুন্দর !! চমৎকার সল্যুশন । পারবোনা চাকরী
ছাডতে !! ও মেয়ের এমনিতেই
বারোটা বেজে গিয়েছে ।
দ্যাখো যা যাননা সে বিষয় নিয়ে কথা বোলনা। আমার চাকরীটা খাটুনির
আর দায়িত্ব সম্পন্ন কাজ । তুমি ভাল করে যান সেটা । ওটা ঊল বোনার
চাকরী নয় যে মেয়েরা পাস করলো কি না করলো মাস গেলে জমা খাতায়
মাইনে ঢুকে যাবে গুঁতো মেরে । চাকরী ? আর চাকরী দেখিওনা !! মেয়েদের
সামনে কি করে কথা বলতে হয় সেটাই তো শিখলে না?
যত্তো
সব । বাবা
গাডীর চাবি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন গজ্ গজ্ করতে করতে ।
মা বাপির কথা কাটা কাটির মধ্যে পারোমিতা মাকে দিয়ে টুক করে সই
করিয়ে নেয় । মা অজান্তে সই করে দেন । কিছুটা নিশ্চিন্ত এবারের মতন।
এবার পডাশুন টা করতে হবে মন দিয়ে। মোবাইলে কল আসে সুমিতের ।
স্বিচ্ অফ করে দেয় । না আর সুমিতের সঙ্গে যাবেনা সে । শেষে কিনা
হেঁসেল ঠেলতে হবে ! ম্যা গো !! মাথাটা টন টন করছে । দিদিকে দেখ ? খুব
খুশী আমাকে বাপী বকেছেন বলে ।
ঈশ্বর প্রেমিক প্রেমিকাকে একি ছাঁচে বানান না । কিছু তার তম্য থাকে ।
আদর্শ শব্দটি অভিধান থেকে মুছে গিয়েছে । সিটি সেন্টারে ওরকম অনেক
যুগল ই ঘুরে বেডান । আমি একটা ঘটনার কথা বলি । সেদিন রাজার হাট্
দিয়ে ফিরছিলাম আমার কারে । তখন বাজে রাত ১১ টা । হঠাৎ আমাদের
কারটাকে দুটো বাইক্ সম্ভবতঃ হিরো মোটর্সের লেটেস্ট মডেল নামটা
বলতে পার্ছিনা , যাইহোগ বাইকে দুই প্রেমি জুগল যাচ্ছেন
। পিলিওনে
যে মেয়েটি ছিলো সে বোসে নয় ফূট রেস্টে দাঁড়িয়ে । বিদ্যুৎ গতিতে
বাইক্ দুটি আমাদের ক্রস করে বেরিয়ে যায় । যদি এতোটুকু অসাবধান
হয় মৃত্যু সুনিস্চিৎ । এটা কি স্টান্ট্ না কি আমি বুঝলাম না ।
এদের মা
বাবা এদের কি শিক্ষা দিয়েছে? অবিশ্যি মা বাবা কে দোস দিয়ে কাজ নেই
ওনারা কি যানেন? আমি ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করলাম ও বোল্ল
, আপ
নেয়া হ্যায় সাব । এ তো হামেশা দেখনেকো মিল্তা হ্যায় । মনে মনে ভাব
লাম আমরা কতো গ্রাম্য, এরা কতো সভ্য । এই যদি সভ্যতা হয় তবে
হে ঈশ্বর আমাকে গেঁয়ো করেই রাখো! সে দিন থেকে আমি আর কাউকে
কিছু জিজ্ঞাসা করিনা । কান মুলছি নাক মুলছি আর না ।নিজের মেয়েদের
কথা ভাবছি ! পরোমার কি হবে ? ওর কি ভবিষ্যৎ ? আমার সময় নেই
এনার্জি ও নেই । সুমি তার স্কুল আর বান্ধবীদের নিয়ে ব্যাস্ত । পার্টীর জন্য
আজ ধারনা তো কাল বন্ধ ।ছারখার হয়ে গেল এই দেশটা এসবের জন্য ।
কথাটা উল্লেখ করলাম এইজন্য যে হামেশা নাকি এরকম হয় । আমরা
ত দেখতে অভ্যস্ত নই তাই বোধ হয় আমার দৃষ্টিকটু লাগলো । মানুষ
সহজ ভাবে নিচ্ছে। আমি বোধহয় গেঁয়ো হয়ে গেলাম বয়েসের সঙ্গে
সঙ্গে। আমার বন্ধুরা বলে তুই এইসব নিয়ে ভাবিস না। ও সব মডার্ন ছেলে
মেয়ে। মনে মনে ভাবি আমার ত দুটো মেয়ে আছে ! তাদের মধ্যে ছোটটাই
মাথা ব্যাথার কারন হচ্ছে ।
আমিত দেখছি আকাংক্ষার মতন মেয়েরাই বিপদে পডে কারন ওরা
নিজেদের নিরাপত্তার দিকে নজর দেয়না। পডাশুনোতে এত ব্যাস্ত থাকে
যে ওদের অন্য দিকে মন যায় না তার সুযোগ নেয় অসামাজিক ব্যাক্তি
। তাই বলি জুডো ক্যারাটে টা মেয়েদের যানা নিতান্ত
জরুরি । ওদের বন্ধু
হাতে গোনা হয় আর ছেলে বন্ধু থাকলেও তারা পাত্তা পায় না এদের কাছে
। কিন্তু পারোমিতা তার বন্ধু শয়ে শয়ে । বাপী
লেটেস্ট এপেলের আই ফোন্
সিঙ্গাপুর থেকে কিনে এনেছেন একটা মা আরেকটা পারোমিতার জন্যে ।
বাপী কি জানেন মেয়ের কীর্তি !
বলেন রেসাল্ট ভাল হওয়া চাই কিন্তু । আইফোন দিতে আপত্তি নেই।
‘কচু’ রেসাল্ট না ছাই ।মা বলেন । ওই মেয়ে গোল্লায়
গেছে ।
এম.এম .এস এ ছবি পাঠান মেসেজ
বক্স এ জোক লাভ এস .এম। .এস
সব ভর্তি । কে দেখবে? দেখার সময় কার আছে । বাপি সকাল থেকে
বেরিয়ে যান ফেরেন রাতে। মা স্কুল টিচার অন্যকে জ্ঞান বিতরণে ব্যাস্ত
নিজের মেয়েকে দেখার সময় কোই ? সোসিয়াল সার্ভিস করে ক্লান্ত ।
স্কুলথেকে এসে এতোই ক্লান্ত যে মেয়ে কি
পোডলো কি খেলো দেখার সময় নেই ।
টিভি, সিনেমার ম্যাগাজিন,তারপর খাওয়া ,ঘুম । ঘরে রান্না বান্না করতে হয়্না কারন
রাঁধুনী
আছেন । ২৪ ঘণ্টার কাজের লোক আছেন।
ঘরে গার্জেন বলতে ঠাকুমা তাঁর তো বয়েস ৭৯+ অতএব তিনি কি
করবেন? ঠাকুরপুজো তেই তাঁর সময় কাটে । ছেলে,বৌ,নাত্নীদের জন্য
সব পুজো । ওনার ঘরে কেউ যায়না । কখনো কখনো বাবা যান আর
মঞ্জু মাসী খাবার দিতে যায় । পারোমিতা কে একদম দেখতে পারেন না
ঠাকুমা । বলেন শুভ( শুভজি বাবার নাম) গোল্লায় যাচ্ছে তোর মেয়ে
। মেয়ের ডানা গজিয়েছে । এখন থেকে দ্যাখ নাহলে ওই
মেয়ে ভোগাবে
তোকে । আমি বলে রাখলাম শুভ ।
আমি কতোক্ষণ থাকি মা ? আপনি বলুন ? আমার সময় কোথায় ?
তবুও তোর শাসন প্রয়োজন । ওকে মোবাইল কেন দিলি ? ওই অলক্ষুণে
মোবাইল ই ওর উচ্ছ্রিঙ্কলতার উৎস । আমাকে ত হুটা হুট্ করে দেয় ।
আপনি শাসন করুন মা । আমি কতক্ষণ ই বা থাকি ?
একটু
শান্তি না
হলে আমার কি ভাল লাগে ? ওইসব শুনতে ভাল লাগে না। সমত্ত মেয়েদের
মা শাসন করবেন না বাবা কি পারে? না মানায় ! আপনি বলুন! শুভ এক
নিশ্বাসে কথাগুল বলে হাঁফ্ ছাডলো ।
সব ই অদৃষ্ট বাবা । হ্যাঁরে মঙ্গল বার দিন একটু সময় করে দক্ষিণেশ্বর
নিয়ে চল না বাবা। কতদিন মায়ের মুখটা দেখিনি। আহা মা সদয় হলে তোর
কোন দুঃখ থাকবেনা।
মঙ্গলবার ! আচ্ছা দেখছি ! টেবলেট পিসিটা তে কি দেখে বললো, মা
একদম ভোরে আপনাকে নিয়ে যাব ।
আমিত সেই ভোর ৪ টেতে উঠি তুই উঠতে পারবিত ?
হ্যাঁ মা পারবো ।
আকাংক্ষা স্কুল থেকে বাসে
ফিরছিল বেলা তখন ৪ টে । রাস্তাতে
হট্টগোল আর জ্যাম্ দেখে আঁতকে ওঠে । ৪.৩০ এর সময় রাস্তা ফাঁকা
হয় ।
ছাত্র ছাত্রী এবং অধ্যাপকদের নিরাপত্তার দাবিতে দুপুর দেড়টা থেকে
ঘণ্টা তিনেক রাস্তা অবরোধ করেন
কলেজের শতাধিক
ছাত্রছাত্রী। তাতে হাজির ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। সকলেরই
অভিযোগ, সন্ধ্যার পর কলেজ ক্যাম্পাস থেকে
বেরোনোর পর প্রায় রোজ দুষ্কৃতীদের অসভ্যতা ও কটূক্তির মুখে
পড়তে হয় তাঁদের। সন্ধ্যার পর রাস্তায় বেরোলে রীতিমতো ভয়ে ভয়ে
থাকতে হয়। ‘আর মোমবাতি নয়, এবার কিছু করে দেখানোর সময়’,
অবরোধে দাবি তোলেন ছাত্রীরা।
কোমল হৃদয়ের শান্ত মেয়ে ‘আকাংক্ষা’ তার মনে এই সব গভীর ক্ষত
সৃষ্টি করে । অনেক প্রশ্ন আলোডন করে বুকের মধ্যে । কেন এই অসভ্য
মানুষগুল প্রশ্রয় পায় ! আর কেনইবা মেয়েদের নিরাপত্তা থাকবেনা এই
শহরে ? প্রশাসন কি নীরব? এরকম অনেক প্রশ্ন ।
বাপীকে কিছুই বলা যায়না এ বিষয় । মা’ ! তিনি তো ব্যাস্ত নিজেকে নিয়ে
। ঠাকুমা ! তিনি ই বা কি করবেন? তবে কাকে বলবে সে ? বোন ! ও শুনলে
হাঁসবে ।মজা পাবে ।
বাডীতে ফিরে একটা ডাইরিতে আজকের ঘটনা সম্পর্কে লিখে রাখল।
বাপীর কথাগুল মনে রেখে খুব মন দিয়ে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি করতে
লাগলো । ম্যাথ্,ফিজিক্স্,কেমিস্ট্রি সব বিষয় গুল ভাল করে রিভিশন
দিয়ে রাখলো। গত দশ বছরের সমস্ত প্রশ্ন র উত্তর শেষ করে ফেলেছে
।খাতা ভর্তি অঙ্ক আর ফিসিক্স্ এর প্রব্লেম সলভ্ করে রেখেছে ।
ইংলিস্ টা আরেকটু রিভিসন করতে হবে । এইরকম ভাবছিল ...।
মা বললেন হ্যাঁরে পারু কোই ? ৭ টা বেজে গেল মেয়টা কোথায় যায়?
তোর সঙ্গে আসেনি?
এতোগুল প্রশ্নের উত্তর কি দেবে ভেবে পেলনা । আমি জানিনা ...
জানিসনা মানে ?
বারে আমি স্কুল সেরে বাডী
ফিরে এলাম । এমনিতেই আমাদের এক্সট্রা
ক্লাস হচ্ছে । আমি কি করে জানবো ওর কথা ?
তুমি তোমাকে ছাডা আর কোন কিচ্ছু কোরনা মা ! বাপের আহ্লাদি
মেয়ে ! বোনটা কোথায় গেল খোঁজ নিবিনা একটু ! জানি তুমি দিগ্গজ্
মেয়ে , তা বলে বোনটার কোন খোঁজ খবর নেবে না?
সরি মা ভুল হয়ে গিয়েছে । আমাকে ভুল বুঝ না।
সুমিতা মোবাইলে নম্বর ডায়াল করতে লাগলেন ... এই অর্পিতা শোন
ভাই তোর বর কে একটু বলনারে ... আমার ছোট মেয়ে পারোমিতা যে তোর
ছেলের বার্থ ডে পার্টি তে নেচেছিল মনে আছে ... হ্যাঁ !... ও এখন পর্য্যন্ত
আসেনিরে । কি করি বল তো?... ইনি দিল্লী গেছেন ফিরবেন কালকে ।
এলেই ত আমার ওপর হম্বি তম্বি করবেন। আমার হয়েছে যত জ্বালা...।
দাঁড়া চিন্তা কোরিসনা ...। আমি একটু পরে তোকে খবর দিচ্ছি।
রাত ৯ টার সময় পুলিসের জিপ্ এল । এটাকি সুভজিৎ ব্যানার্জীর বাডী ?
ভয়ে তটস্থ সব্বাই । হ্যাঁ ...। কি হয়েছে ?
দেখুন চিনতে পারেন কিনা ?
আমার বুক টা দুরু দুরু করতে লাগলো । মা গিয়ে যা দ্যাখেন । হতভম্ব
হয়েযান । পুলিসের জীপের পেছনে দুটি ছেলে মেয়ে । তার
মধ্যে একটি চেনা
। সে আমাদের পরমা ...পারোমিতা.... ।অন্যটিকে চিনিনা ।...
ত্রিভুবনজি মুখার্জী ।
৩১.০১.২০১৩ বিকেল ৫ টা ।
১৭ই মাঘ ১৪১৯ বৃহস্পতিবার বেলা ৫ টা