Monday, September 17, 2012

সংস্কৃত অতনু বর্মণ


সংস্কৃত

অতনু বর্মণ


ফরফর করে কেউ ইংরাজি বললে আমবাঙালি যেমন তার দিকে সমীহ করে তাকায়, একদা সংস্কৃত ভাষাটির ছিল সেই দাপট। অং বং চং বলা পণ্ডিতের কদর ছিল সর্বত্র। অধুনা ভাষাটি সংস্মৃত হলে কী হয়, অন্নপ্রাশন থেকে পিণ্ডদান পর্যন্ত এই ভাষার উপস্থিতি এখনও অটুট। ঠাকুরমশাই যা বলেন, অর্থ না বুঝেই তা আওড়ে যাওয়া বাঙালির রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গিয়েছে। ফি-বছর মহালয়ায় বাঙালি রেডিওতে ব্যাটারি লাগায়, কেউ কেউ রেডিওটাই কিনে আনে বাড়িতে। তারপর সারা বছর সেটায় পিঁপড়ে ডিম পাড়ে, মাকড়সা জাল বোনে এবং মহালয়ার আগের দিন তাকে চেক-আপে নিয়ে যাওয়া হয়। দোকানদার বলে, ‘এ আর চলবে না, একটা নতুন নিয়ে নিন, কতই বা দাম’! পুজোয় নতুন জামা, নতুন জুতোর মতোই বহু বাড়িতে নতুন রেডিও কেনা হয় ‘যা দেবী সর্বভূতেষু’ শুনবে বলে।
অর্থ না বুঝলে কী হয়, অর্থ বানিয়ে নিতে বাঙালির ধারেকাছে আসবে না কেউ। সেই কবে শিব্রাম চকরবরতি মশাই ‘কাকস্য পরিবেদনা’-র স্বকৃত অর্থ করেছিলেন- ‘কাকে বেদানা খাচ্ছে’, সেই রীতি আজও বহমান। দেশগাঁয়ে বড়-বাইরেকে বলা হয় বাহ্যে যাওয়া। আমাদের শ্যামাদাস বহুদিন জানত যে, ‘বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া’ মানে বাহ্য করার পূর্বে অনুষ্ঠিত লঘু ক্রিয়াগুলির কথা বলা হচ্ছে। জানি না ‘এহ বাহ্য’ বলতে সে কী বুঝতো!
ছোটবেলায় ঠাকুমার কাছে শোনা একটা গল্প মনে পড়ে গেল। গাঁয়ের মাতব্বর পালমশাইয়ের ঘরে লক্ষ্মী বাঁধা, যদিও তার তিনকুলে কেউ সরস্বতীর স্পর্শলাভ করেনি। এহেন পালমশাই গেছেন বদ্যিবাড়ি। কবিরাজ পালমশাইয়ের নাড়ি ধরেই চোখ বন্ধ করে বলে গেলেন-‘ওঁ জবাকুসুম সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ম মহাদ্যুতিম, ধ্বন্তারিং সর্বপাপঘ্ন প্রণতস্মি দিবাকরম’। কবিরাজ যে সূর্যপ্রণামের মন্ত্র জপলেন, সে বোঝা তো পালের সাধ্য নয়। পাল ঘাবড়ে গিয়ে বলল, ‘কী বলছেন কোবরেজমশাই, কিছুই তো বুঝতে লারলম, টুকচি বুঝাইন দ্যান’। কবিরাজ তখন বুঝিয়ে বললেন, ‘ওঁ জবাকুসুম মানে তোর চোখ জবাফুলের মতো লাল হয়েছে। সঙ্কাশং মানে সঙ্গে কাশিও আছে শুধু নয়, কাশ্যপেয়ম মহাদ্যুতিম অর্থাৎ খুব ঘন ঘন কাশি হচ্ছে। ধ্বন্তারিং সর্বপাপঘ্ন অর্থাৎ আমি সব রোগের ধন্বন্তরি। প্রণতস্মি দিবাকরম মানে প্রণামীটা আগে দে বাবা’!
আমাদের অল্পবিস্তর সকলেরই ধারণা যে, সংস্কৃত মানেই অনুস্বারের বাড়বাড়ন্ত। অং বং চং সহ হিং টিং ছট প্রভৃতি নানান কিসিমের বাকবিন্যাসে আমরা এক একজন সংস্কৃত পণ্ডিত। রঙচঙ মেখে হংকং ঘুরে আসা থেকে ক্রিংক্রিং সাইকেল, ঢং-ঢং ঘন্টা, এমনকি কাবলিওলার হিং অথবা সিনেমায় কিং কং- সবই আমার সংস্কৃত মনে হয়।
এই সূত্রে আবার ঠাকুমার ঝুলি এবং আবার একটি গপ্পো। পদ্মলোচন পিতৃমাতৃহীন। খুড়ো আর খুড়িমার নয়নের মণি। নিরক্ষর খুড়ো আদরের পদ্মলোচনকে ভর্তি করেছিলেন পণ্ডিতের টোলে। এদিকে পদ্মলোচনের মোটেও বিদ্যায় রুচি নেই। তার ধারণা, ‘বিদ্যাস্থানে ভয়ে বচ’। কোনওক্রমে বছর ঘুরতেই টোলফেরত ভাইপো বাড়ি ফিরছে শুনেই খুড়ো সেঁধিয়েছেন খাটের তলায়। পণ্ডিত ভাইপোর সঙ্গে নিরক্ষর খুড়ো কথা বলবে কী করে! এদিকে গুণধর ভাইপো ঘরে ঢুকেই বলল, ‘খুড়িং খুড়িং, খুড়োং কোথাং’? সরলা খুড়িমা গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসলেন, ‘অনুস্বার লাগালে যদি সংস্কৃত হয়/তবে কেন খুড়ো তোমার খাটের তলায় রয়’।
এগুলো গল্পই। যদিও গল্প হলেও মেসেজটি পরিষ্কার। সংস্কৃত ভাষাটির অনুসারী দুই প্রকার। প্রথম পক্ষ হল তারা, যারা সংস্কৃত বোঝে না। আর দ্বিতীয় পক্ষ হল তারা, যারা একটু বেশি বোঝে। যারা বোঝে না, তাদের নিয়ে গন্ডগোল কম। তারা অনুস্বার লাগিয়ে মজা করে আর যারা বেশি বোঝে তাদেরকে নিয়েই মুশকিল। এরা সবকিছুকে সংস্কৃতের গর্ভজাত করে প্রমাণ করতে না পারলে শান্ত হয় না। একইরকম এক বেশি বোঝা সংস্কৃত পণ্ডিতের দাবি যে, দার্জিলিং শব্দটির উৎস নাকি ‘দুর্জয় লিঙ্গ’ শব্দ থেকে। কে যে কোথা থেকে এসেছে- দেবা ন জানন্তি। বৈদিক ভাষাকে সংস্কার করার ফলে যা দাঁড়াল, তারই নাম ছিল সংস্কৃত। কালে কালে যাকে আমরা বহিষ্কার করেছি এবং ভাষাটি এখন বহিষ্কৃত। ভাষাটির পোশাকি নাম দেবভাষা। দেবদেবীর ভাষা নিয়ে মানুষের কী বা কাজ! অন্তঃসারশূন্য বাঙালি তাই সংস্কৃতকে বরণ করেছে একটিমাত্র বর্ণে- ‘অনুস্বার’। বর্ণকে কোমল করে যদি বরণ হয়, তাহলে কি মর্ণ থেকে আগত- চন্দরা কহিল- ‘মরণ’।

Sunday, September 2, 2012

গঙ্গা-ভ্রমন ও ইলিশ-উৎসব / দেবাশিষ কাঞ্জিলাল ।

গঙ্গা-ভ্রমন ও ইলিশ-উৎসব
--------------------------------          
২/৯/২০১২  দেবাশিষ কাঞ্জিলাল ।
---------------
আজ সকালে আমাকে আর ঈশানচন্দ্রকে নিয়ে আমার পালিকা নৌ-ভ্রমনে গেছিলেন।
সঙ্গে ছিল আমার বড় মেয়ে-জামাই, দেবশ্রী ও রাজীব। আর ছিল কাজল,যে আমার দুই মেয়ে দেবশ্রী ও রাজশ্রীকে শিশুকাল থেকে পালন করেছে এবং এখন আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। আর ছিল মৌসুমী নামে এক বালিকা,যে এখন ঈশান-পালিকা !
শুধু ছোট মেয়ে-জামাই, রাজশ্রী-প্রনব ছিল না বলে আমাদের বৃত্ত অসম্পূর্ণ থাকার এক দুঃখ খুব কষ্ট দিয়েছে আমাদের !

সেই গঙ্গা ভ্রমন শেষ করে একটু আগে ফিরলুম। 
ফেয়ারলি প্লেসের ঘাট থেকে ছাড়ল লঞ্চ বেলা দশটা নাগাদ। প্রায় আশিজন আমরা একসঙ্গে। যে সংস্থাটি আমাদের নিয়ে এই ভ্রমনের আয়োজন করেছে, Travel Plus Howrah, তার ব্যবস্থাপকেরা প্রথমে শুরু করলেন আমাদের পারস্পরিক পরিচিতি জানাতে। 
এই অনুষ্ঠানের অন্যতম অজুহাত ছিল ইলিশ। তাই তাঁরা এর নাম দিয়েছিলেন 'ইলিশ-উৎসব' ! 
লঞ্চের পিছনে রান্নার আয়োজন, আর সামনে দু'পাশে আমরা বসে শুনছি গান,মাইক্রোফোনে। সে গান ছড়িয়ে যাচ্ছিল লঞ্চের বাইরেও, হয়তোপৌঁছে যাচ্ছিলো গঙ্গার দু পাড়ে ! 

লঞ্চ চলেছে, চলছে গান, quiz,নানা প্রতিযোগিতা। আমি সেই quiz এ প্রেমেন্দ্র মিত্রর ঘনাদার প্রথম গল্পের নাম 'মশা' বলে দিয়ে, ফাঁকতালে একটি প্রাইজ পেয়ে গেলুম ! আসলে দীপায়ন নামে প্রশ্নকারী যখন প্রশ্নটি করেছিলো, সেই সময়ে আমার পায়ে একটি মশা কামড়াচ্ছিলো, তাই খুব আস্তে বলেছিলুম , 'কি মশা' ! 
ব্যস, সেই মূহূর্তেই দীপায়ন,'সঠিক উত্তর' বলে আমার হাতে প্রাইজের পেনটি তুলে দিলে, আর সব লোক মহা হাততালি দিতে লাগলে, আর আমার কিছু বলাই হল না !
পরে আমি যখন দীপায়নকে আলাদা করে ব্যাপারটি বোঝাতে গেলুম যে ওই প্রাইজ আসলে আমাকে কামড়ানো সেই মশাটিরই পাওয়া উচিত, সে শুধু হাসতে লাগল, আর আমার ফোন নম্বর, ইমেল আইডি এইসব নিলে। মনে হল সে বোধহয় আমাকে একটু 'cultivate' করতে চায় ! 

কিন্তু ঈশানচন্দ্রের বোধহয় এইসব খুব একটা পছন্দ নয়,তাই সে 'নীচে জলে...নীচে জলে' বলে ,তাকে নিয়ে জলে নামতে আমাকে প্ররোচিত করেই চলল ! তখন সেই হাঙ্গামায় বাধ্য হয়ে, নীচের বদলে তাকে নিয়ে ওপরে হুইল-হাউসে উঠলুম লোহার সিঁড়ি বেয়ে। এইখানে কাঁচের ঘরে যে ভদ্রলোক হুইল চালাচ্ছিলেন, তাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণের মধ্যেই সখ্য পাতিয়ে সে একটু হুইলও ঘুরিয়ে নিলে মহাখুসী হয়ে ! 

এ দিকে দু'সপ্তাহ আগে ঈশানচন্দ্র পুরীতে তার আড়াই বছরের দীর্ঘ জীবনে প্রথম একসঙ্গে এত জল দেখে এসেছে ,আর সাগর চিনেছে। স্বাভাবিক ভাবেই সে আজ নদীকে সমুদ্র বলতে শুরু করেছিল। যখন তাকে বললুম,এ হল গঙ্গা, তখন প্রথমে তার একটু আপত্তির ভাব ছিল। পরে অবিশ্যি সে আপত্তি আর খুব একটি ছিল না তার।
আজ সে নৌকো চিনল, মাঝি, মাঝধরার জাল, আরো অনেক কিছু জানলে। 

আর তার হাতের একটি খেলনা টিয়াপাখি, যেটি তার মা বেলুড় মঠে নেমে এনে দিয়েছিল সবে, সেটিকে, যেমন করে সে তার মা-বাবার বই দশতলার থেকে নীচে ফেলে দেয়, সেই ভাবেই গঙ্গায় বিসর্জন দিয়ে খুব আমোদ পেয়েছে !আর তার এই কীর্তিতে যেই তার মা রেগে গেছে, সঙ্গে সঙ্গে যথারীতি, সে তার সুরেলা গলায় আমায় বকতে শুরু করেছে,' দাদা, তুমি পাখি জলে ফেলে দিইইইলেএএএ ক্যায়ায়ানোওওওও ~~ ? 

লঞ্চ চলেছে গঙ্গার বুকের মাঝখান দিয়ে। ডানদিকে পড়ল নানা সব ঘাট। নিমতলা ঘাট দেখে আমার জীবনের একমাত্র ঠাকুরের স্মৃতি মনে এল। এটিই ছিল তাঁর জীবনের শেষ ষ্টেশন। বাঁদিকে উত্তরপাড়া, ভদ্রেশ্বর, নানা ঘাট, কত দুরে সব গাছপালা ছবি যেন, ল্যান্ডস্কেপ।
এবার এসে পৌছলুম বেলুড় মঠের ঘাটে। নোঙ্গর পড়লো জলে।

আরেকটি ঘটনা চোখে পড়ল আজ এই নৌ-ভ্রমনের সুবাদে। লঞ্চ যখন চলেছে মাঝখান দিয়ে দু' পাড়কে বড়ো সুন্দর দেখিয়েছে ছবির মতই। শুধু যখনি কোন পাড়ের কাছে গেছে, সেই পাড়কে দেখিয়েছে বড় কুশ্রী, আর উল্টোদিক বড়োই মনোময় সবুজ ! অথচ কত বড় এক মিথ্যে এটি ! আমাদের জীবন-নদীতেও যখন বয়ে যাই আমরা, তখনো এই ঘটনাই ঘটে বোধহয় !

এবার ইলিশ-উৎসব শুরু। ইলিশের মাথা দিয়ে কচুর শাক, তেলের সঙ্গে ইলিশ-ভাজা, শর্ষে-ইলিশ,দই-ইলিশ,ইত্যাদি ইত্যাদি,ইলিশের পরাকাষ্ঠা ! আমার সেই সব রূপোলী-সুন্দরীদের জন্য এত মন খারাপ হল, আমি তাদের স্মৃতিতে শর্ষে-ইলিশ খেলুমই না, মনের দু;খে ! সবাই তাই শুনে আমাকে খুব বাহা বাহা করতে লাগল। আমি ভাবছিলুম, এই সুযোগে যদি সবাইকে দিয়ে ইলিশ-সুন্দরীদের আত্মার প্রতি দু' মিনিটের নীরবতা পালন করানো যায়, তা'হলে দু'শো মজা হবে ! কিন্তু আমার পালিকা ,যিনি আমায় নিয়ে সর্বদাই সন্দিহান থাকেন যে আমি কখন কি করে বসি, তিনি বোধহয় কিছু আঁচ করে ,তাড়াতাড়ি খেয়ে ওঠার আদেশ জারী করলেন। আমার এই সৎ উদ্যোগ একেবারেই মাঠে মারা গেল ! আর মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আমার মেয়ে , কানে কানে চুপিচুপি এসে বলে গেল ,'তোমার শর্ষেতে Allergy বলে তুমি শর্ষে-ইলিশ খেলে না, আর তাই নিয়ে সবাইকে এমন নাচালে' ! সেই 'ঘরের শত্রু বিভীষন' বলে ইংরিজিতে একটা কথা আছে না, তার মানে এখন আবার বুঝতে পারলুম নতুন করে।

এদিকে ঈশানচন্দ্র আবার হুইল-হাউসে যাবার বায়না শুরু করেছে। আবার তাকে নিয়ে চললুম ওপরে। সেখানে চালক-ভদ্রলোক ছিলেন না, নীচে খেতে নেমেছেন বোধহয়। তবে তাঁর দুটি ছোটো ছেলে-মেয়ে মহানন্দে হুইলটি ঘোরাচ্ছিল ! আমি দেখে আঁৎকে উঠে তাদের এই প্রয়াস থেকে বিরত করতে চাইলুম, যাতে তাঁরা কিছু অঘটন না ঘটায়। তাতে তাঁরা নির্বিকার ভাবে জানিয়ে দিলে যে আমার জলযান সম্পর্কে নাকি আদৌ বিন্দুমাত্র ধারনা নেই, তাঁরা এই কর্ম প্রায়ই করে থাকে, এবং তাতে আজ পর্যন্ত কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয় নি ! তাদের কথার প্রত্যয় দেখে আমার আত্মবিশ্বাস আজ টলে গেল। কেন জানি না, মনে হতে লাগল, সত্যিই আমি বোধহয় বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনীয়ারিং বিষয়গুলি সত্যিই কিছু জানি না ! এই ব্যপারে অবিশ্যি আমার নিজেরই বরাবর একটি সন্দেহ ছিল, আজ এই শিশুরা আমার সেই সন্দেহ যে সঠিক তা প্রমান করে আমাকে একেবারে চিন্তামুক্ত করে খুব খুসি করে দিলে ! 

এই শিশুদুটি তার পরে মহা উৎসাহে আমাকে নৌ-বিজ্ঞান সম্পর্কে এমন চিত্তাকর্ষক বহুকিছু শেখালে ,যা সারা জীবনে কোন ইঞ্জিনীয়ারিং বইতে পাওয়া যাবে না। তাঁরা এও জানালে, এগুলি তাঁরা জন্মগত সূত্রেই জেনেছে ! তাদের সঙ্গে আমার আর ঈশানচন্দ্রের এমন বন্ধুত্ব হয়ে গেল, তাঁরা আর আমাদের ছাড়তে চাইলে না, তারাও আমাদের সঙ্গে নীচে নামলে !

এরপর সূর্যদেব তাঁর সাত-ঘোড়ার রথে শুরু করলেন দিগন্তের দিকে যাত্রা। আমাদেরও শুরু হল ফেরা। ঊঠল নোঙ্গর, বন্দরের কাল হল শেষ !

ফেরার পথে ঈশানচন্দ্র তেমন কিছু আর করে নি। শুধু ,আমরা যখন কোল্ড-ড্রিঙ্কস খাচ্ছিলুম, তখন 'আমাল গোলা বেথা,আমায় কোল-ডিঙ্কস দাও ' বলে সামান্য হামলা করে ঠিক আমার কাছ থেকে তা' আদায় করে খেয়ে, আমাকে একটু বকুনি খাইয়েছে !

এরপরে এসে নামলুম আবার ফেয়ারলির ঘাটে, তারপরে বাড়িতে ফেরৎ । ঈশানচন্দ্র চলে গেল তার বাড়ীতে, কাল আবার তার স্কুল আছে তো, তাই ! 

আমি এখন সেই মেঘ-পিওন, যার ব্যাগে মন-খারাপ থাকে দিস্তা দিস্তা, বিকেলে ঈশানচন্দ্র চলে যাবার পরে যার মন খারাপ হয়ে কুয়াশা হয়েছিল, তা' এখন ব্যাকুল হয়ে তিস্তার মত বইছে তার মনে !